আসামির স্ত্রীকে গণধর্ষণ মামলা পিবিআইতে

‘এসআই খায়রুলকে ভালোভাবেই চিনি, ভয়ে নাম বলিনি’

‘এসআই খায়রুলকে ভালোভাবেই চিনি, ভয়ে নাম বলিনি’

যশোরের শার্শার লক্ষণপুরে গৃহবধূ গণধর্ষণ মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরের আদেশে মামলাটি যশোর পিবিআই গ্রহণ করেছে। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হলেও একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ওই অজ্ঞাত আসামি-ই এসআই খায়রুল নাকি অন্য কেউ তা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

এদিকে শুক্রবার ওই গৃহবধূর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ওই নারীর বাড়ি যান। প্রতিনিধি দল এ সময় তাকে আইনগত সহায়তার আশ্বাস দেন।

এ সময় গৃহবধূ তাদের বলেছেন, ‘ভয়ে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সামনে গোড়পাড়া ফাঁড়ির এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করতে পারিনি। আমি খায়রুলকে ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ ও ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছেন তিনি। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে।’

পুলিশের দাবি, ভিকটিমের সামনে এসআই খায়রুলকে হাজির করা হলে তিনি চিনতে পারেননি। এ জন্য একজনকে অজ্ঞাত আসামি রেখেই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।

মামলা হস্তান্তর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিবিআই যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। সেগুলো সম্পন্ন করেই তদন্ত শুরু হবে। অচিরেই প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

ধর্ষিতা গৃহবধূর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, হতে পারে সেদিন ভিকটিম ভয়ে এসআই খায়রুলের নাম বলেননি। কনফিউশন ছিল বলেই মামলায় একজন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় খায়রুল জড়িত, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ব্যক্তির দায় সংস্থা বহন করবে না।

তিনি বলেন, ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেয়া হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রথম থেকেই পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

ধর্ষিতা গৃহবধূ বিএনপি নেতাদের বলেন, ‘পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে আনে এবং জিজ্ঞেস করছিল- ইনি ছিলেন কিনা। তখন আমি ভাবলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারেবারে আমার স্বামীরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে আমি পারব না। তাছাড়া খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে, তার চোখের ভাষায় আমি বুঝতি পেরেছি।’

ধর্ষণের সময় এসআই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা বলবে। কারণ তারা আরও ভালো জানে।’ গৃহবধূ আসামিদের শাস্তি দেখে আরো ৫-১০ জন মানুষ যেন এমন অপকর্ম করতে সাহস না করে।

পরে নিপুণ রায় বলেন, এসআই খায়রুলসহ চারজনের নাম এসেছে। ভয়-ভীতি দেখানোয় এসআইকে মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয়নি।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে নিপুণ রায় বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে এসআই খায়রুলকে এক নম্বর আসামি করে তাকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’

গত ২ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর এলাকায় ওই গৃহবধূর বাড়িতে ২ সেপ্টেম্বর গভীররাতে যান এসআই খায়রুলসহ চারজন। তারা এ সময় ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে খায়রুল ও কামরুল তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন। ধর্ষণে সহায়তা করেন আরো দুইজন।

পরদিন গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে গেলে বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। ওইদিন রাতেই শার্শা থানায় মামলা করেন গৃহবধূ। মামলায় এসআই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি। আসামি করা হয়েছে পুলিশের সোর্স কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল, লক্ষণপুর এলাকার আবদুল লতিফ এবং আবদুল কাদেরসহ চারজন। ঘটনা তদন্তে শার্শা থানার ওসি (তদন্ত) আল ফরিদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি তদন্তও শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবার মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তরর করা হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে, সেখানে কার কার সিমেন (বীর্য) রয়েছে তা জানতে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন।

এমআই