চাঁদাবাজি-দুর্নীতি: দায় কি শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগের?

চাঁদাবাজি-দুর্নীতি: দায় কি শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগের?

বাংলাদেশে চাঁদাবাজির অভিযোগে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে সরানোর পর এখন যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, চাঁদাবাজি, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ নিয়ে অনেক দেরিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সহযোগী সংগঠনগুলোর ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, তাদের দলের সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে এবং সহযোগী সংগঠনগুলোতে জবাবদিহিতার জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

তবে নানা অভিযোগ নিয়ে পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক অবস্থায় এসেছে, সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ব্যর্থতা আছে কিনা বা এর দায় কার ওপর বর্তায়-এসব প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

আওয়ামী লীগের আরেক সহযোগী সংগঠন যুবলীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনেরও ঢাকা নগরীর দু'জন নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেজন্য অভিযুক্ত দু'জনের বক্তব্য শুনতে তাদের ডেকেছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের অনেক কর্মকাণ্ড বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ বা সরকারকে বিব্রত করেছে। তবে এবার চরম বিপদজনক পরিস্থিতি হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলছেন।

দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি'র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলছিলেন, চাঁদাবাজিসহ গুরুতর নানা অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে অনেক বিলম্ব করা হলো।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "এত সময় লাগলো কেন এই বিষয়টাকে চিহ্নিত করতে এবং এটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে? আমি আশা করবো যে, শুধু প্রধানমন্ত্রী একা নন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা প্রত্যেকে এই কথাটা ভাববেন যে, এপর্যন্ত কত ক্ষতি হয়েছে- সেই ক্ষতির জন্য তারা একটু অনুতপ্ত বোধ করেন কিনা?"

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পিছনে বড় অভিযোগ ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বড় অংকের চাঁদা দাবি করা।

যুবলীগের ঢাকার দু'জন নেতার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের কথা তুলে ধরছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, এবার এসব অভিযোগ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন এবং তিনি দলীয় ফোরামে ক্ষোভ প্রকাশের পর ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্ন এসেছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ই নানা অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সেগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা সেভাবে দৃশ্যমান ছিল না বলে তাদের মনে হয়েছে। আর সেকারণে বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় পৌঁছানোর পিছনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলছিলেন, সবকিছু এককেন্দ্রিক হওয়ার কারণে পরিস্থিতি এমন হয়েছে।

"এটিতো একদিনে তৈরি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটাকে সাধুবাদ জানাই। তবে এমন পদক্ষেপ ১০ বছর আগে থেকে নেয়া হলে হয়তো এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।"

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আমাদের সমস্যা হচ্ছে, এখন সবকিছু প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হয়। জবাবদিহির বিষয়টা প্রত্যেক পর্যায়ে থাকতে হবে। সেই পর্যায়গুলো অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই যদি সব দায়িত্ব দেয়া হয়, এত কাজের ভিতর সবতো তাঁর দেখা সম্ভব নয়।"

মিস্টার ইসলাম আরও বলেছেন, "এগুলো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠিকভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ করতে পারতেন। কিন্তু কেউ সেরকম হস্তক্ষেপ করতে সাহস পান না। সবার ধারণা, যদি একারণে বা কোন কারণে প্রধানমন্ত্রী বিরাগভাজন হয়ে যান। এখনতো দেখা যাচ্ছে, কাজটি প্রধানমন্ত্রী করলেন। সেটি অনেক আগে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও করতে পারতেন।"

তবে পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এবং দায়ভারের ইস্যুতে এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

তিনি বলছিলেন, "ছাত্রলীগের অতীতে যে দু'একটা ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ছোটখাটো মারামারি ঘটনা। সেগুলোকে শক্তভাবেই শাসন করা হতো। কিন্তু এই শিষ্টাচার বহির্ভূত এধরণের অভিযোগ আগে কখনও আসেনি। এবং নানান শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।"

তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ অভিভাবক হিসাবে কখনই ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কোন ধরণের অন্যায়ে সমর্থন করেনি। তারা শাসন করেছে। শাসনের মাত্রাটা হয়তো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি।"

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, এখন কঠোর যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে সাময়িকভাবে সমালোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত মানুষ ইতিবাচক হিসেবে নেবে। সূত্র : বিবিসি

এমজে/