বাগমারার মা-ছেলে হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন

বাগমারার মা-ছেলে হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন

রাজশাহীর বাগমারার আলোচিত মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যা মামলার রায়ে তিনজনকে ফাঁসি এবং চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চার আসামির প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মামলার সব আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের নির্দেশে তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

রায়ে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আবুল হোসেন মাস্টার (৫২), হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) ও চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাক (৩৫)। এর মধ্যে আবুল হোসেন মাস্টার বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেউলা রানী রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আর হাবিবুরের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কাশেম। এছাড়া ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাক (৩৫) রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি (২২), একই গ্রামের লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী (২৬) এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির (২৩)। রায়ের পর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলেই মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাটিতে মোট ৫১ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এরপর বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আদালত সূত্র জানায়, বাগমারার দেউলা গ্রামের নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা।

সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী দুইজন। এরা হলেন- নিহত আকলিমা বেগমের দেবর আবুল হোসেন মাস্টার (৫২) এবং অপরজন হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০)। আবুল হোসেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দেউলা রানী রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও তিনি। আর হাবিবুরের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কাশেম।

মামলায় অভিযুক্ত অন্য পাঁচজন হলেন- দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাক (৩৫), একই উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি (২২), একই গ্রামের লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী (২৬) এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির (২৩)। এরা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

নিহত আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন জানান, ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই সব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। দিনে দিনে তারা বড় হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে তার ভাই জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচা আবুল হোসেনের পর তার ভাই জাহিদ ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চায়। এনিয়ে চাচার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।

দুলাল জানান, তিনি আলাদা বাড়ি করে থাকেন। আর তার মা ও ভাই এক বাড়িতে থাকতেন। এই বাড়িতে জাহিদ না থাকলে আবুল হোসেন বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে এই নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করা হতো। এসবের প্রতিবাদ করতেন তার মা। এনিয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়।

দুলাল আরও জানান, ২০১৩ সালে জাহিদের পড়াশোনার জন্য তার মা আকলিমা বেগম রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সেখানে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। হাবিবুর মাদক ব্যবসা করতেন। এই কাজে তিনি আকলিমাকে ব্যবহারের চেষ্টা করতেন। কিন্তু আকলিমা এতে রাজি হননি। আর আবুল হোসেনের সঙ্গে হাবিবুরের পরিচয় ছিল। এসব দ্বন্দ্বওর জের ধরে তারা আকলিমা ও জাহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভাড়াটে খুনিদের নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে তার মা ও ভাইয়ের গলা কেটে হত্যা করেন।

এমজে/