যুবলীগ নেতা সম্রাটের খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা ও সোয়াত

যুবলীগ নেতা সম্রাটের খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা ও সোয়াত

চাঁদাবাজি, অবৈধ জুয়া (ক্যাসিনো ) ও মাদক ব্যবসা, দখলদারিত্বের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ একাধিক নেতাকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে রাজধানী চষে বেড়াচ্ছে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম। পাশাপাশি বিশেষ এই অভিযানে অংশ নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশের স্পেশাল এলিট ইউনিট ‘সোয়াত’।

গত বুধবার রাত থেকে ২ দিনব্যাপী রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী সম্ভাব্য এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাবের একাধিক গোয়েন্দা দল। কিন্তু কোনে ক্রমেই সম্রাটকে বাগে পাচ্ছে না আইন শৃংখলা বাহিনী।

হয়তো কোনও বড় ভাইয়ের আশ্রয়ে সকলের আড়ালে রয়েছেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেই গ্রীন সিগন্যাল পাবেন তিনি। তখন আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন।

ধানমন্ডির একাধিক সূত্রের তথ্যানুসারে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতারে যুবলীগের চেয়ারম্যানের ধানমন্ডির বাসার সামনে ও আশপাশে অবস্থান নেয় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয় তারা। এদিকে গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, দলের শীর্ষস্থানীয় কোন নেতার আশ্রয়ে অবস্থান করছেন সম্রাট। এখন তিনি আর প্রকাশ্যে আসছেন না। আত্মগোপনে থেকে পরিস্থিতি অবলোকন করছেন।

সূত্রটি আরো জানায়, সম্রাটের খোঁজে ঢাকার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম রাজধানীর বাইরেও গেছে। তারা সম্রাটের গ্রামেরবাড়ি নোয়াখালী বা ফেনীর ছাগলনাইয়া থানা এলাকা ছাড়াও সম্ভাব্য নিকটাত্মীয়দের বাসায় খোঁজ নিচ্ছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, সম্রাট ঢাকা শহরেই রয়েছেন। হয়তো কোনও বড় ভাইয়ের আশ্রয়ে সকলের আড়ালে রয়েছেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেই গ্রীন সিগন্যাল পাবেন তিনি। তখন আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন।

প্রসঙ্গত জানা যায়, ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে জানা যায়। যার প্রেক্ষিতে গত বুধবার সকাল থেকেই সম্রাটকে নজরদারিতে রাখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনটাই জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। মূলত গত বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (ক্রীড়া চক্র) ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর তাকে গ্রেপ্তারের এই গুঞ্জন উঠে। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে হাজার সংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে কাকরাইলের যুবলীগের কার্যালয়ে রাতযাপন করেন তিনি।

এদিকে একই অভিযোগে সেদিন রাতেই অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ মহানগর দক্ষিন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ক্যাসিনো বিরোধী আমাদের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কখন কোথায় অভিযান পরিচালনা করা হবে বা কাকে গ্রেপ্তার করা হবে তা কৌশলগত কারণে ডিসক্লোজ (প্রকাশ) করা হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করছি না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র‌্যাব। তাই যাদের নাম তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যাবে তাদেরকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

অন্যদিকে রাজধানীতে আর ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড চলতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা, ক্যাসিনো পরিচালনার ক্ষেত্রে যতো প্রভাবশালীরাই জড়িত থাকুক না কেন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র‌্যাব অভিযান শুরু করেছে পুলিশও করবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনোর তালিকা করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ এ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। রিয়াজ, মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া। আর এসবই তিনি করেছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের শেল্টারে। সম্রাটের সহযোগিতায় ও প্রত্যক্ষ মদদে ঢাকার এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন খালেদ। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি। রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স নামের ক্লাবটি সরাসরি পরিচালনা করেন তিনি। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো খেলা হচ্ছে।

সূত্রে আরও জানা যায়, সম্রাটের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগের একটি প্রতিবেদন এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং অবৈধ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার কিছু লোকজনের দৌরাত্ম্যে। এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় তার অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক গন ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাদের দোয়া করেন এবং চলার বিষয়ে পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগকে ধরা শেষ, এখন যুবলীগকে ধরছি। এখানে নালিশ করার কিছু নেই। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও মাদক নির্মুলের অভিযান চলবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।