ক্যাসিনো-জুয়া থেকে মাসে ২ কোটি টাকা পেতেন সাবেক পুলিশ কর্তা?

ক্যাসিনো-জুয়া থেকে মাসে ২ কোটি টাকা পেতেন সাবেক পুলিশ কর্তা?

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা। আরামবাগ-ফকিরাপুলের ক্যাসিনো পাড়া থেকে যার প্রতি মাসে উপার্জন ছিল দুই কোটি টাকার ওপরে। মহানগর পুলিশে এটি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। খোদ পুলিশের মধ্যেই এ নিয়ে এখন কানাঘুষা চলছে।

রাজধানীর ক্লাব ও ক্যাসিনোগুলোতে অব্যাহত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব-পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ক্লাবগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই ক্লাবটির সভাপতি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ক্লাব থেকে ১৪২ জন নারী ও পুরুষকে জুয়া খেলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

ওই রাতে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও বনানীস্থ গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্যাসিনোতে অভিযান চালান র্যাব সদস্যরা।

২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে অভিযান চালান র‌্যাব সদস্যরা।

২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মোহামেডান, আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে অভিযান চালানো হয়।

গতকাল রবিবার রাজধানীর ক্লাবপাড়ায় আরামবাগ ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব ও বাড্ডার ইস্টওয়েস্ট ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। এসব ক্লাব থেকে জুয়া ও ক্যাসিনোর সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে এভাবে কম হলেও দুই শ’ ক্লাব রয়েছে। যেসব ক্লাবে জুয়ার আসর বসত। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে ওই সব ক্লাবে আপাতত জুয়া খেলা বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে পাড়া-মহল্লার ক্লাবও রয়েছে।

এ দিকে রাজধানীর ক্লাব-ক্যাসিনোগুলোতে অভিযান শুরুর পরেই এ নিয়ে নানা সমালোচনায় পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ-র‌্যাবের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে অনেকেই ইঙ্গিত করতে চেষ্টা করেন, এভাবে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এত দিন কী করেছেন? এমনকি মতিঝিল থানার আশপাশেই রাতভর এভাবে জুয়ার আসর বসত কিন্তু পুলিশ এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে কোনোই ব্যবস্থা নেয়নি কেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, ক্যাসিনো ও ক্লাবগুলো যারা পরিচালনা করতেন তাদের প্রতি যেমনি ঘৃণা, তেমনি এগুলো দেখেও প্রতিকারের ব্যবস্থা না করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দুষছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ের সদস্যরাই নয়; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক শীর্ষ কর্মকর্তারও জ্ঞাতে এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটে আসছিল। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধেই এই অনৈতিক স্থান থেকে নিয়মিত বখরা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরামবাগ ও ফকিরাপুলের ক্যাসিনো পাড়া থেকে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতি মাসে এই এলাকা থেকে দুই কোটি টাকার বেশি হাতাতেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিনিময়ে তিনি ওই সব আসরের নিয়ন্ত্রকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুয়ার আসরের নিয়ন্ত্রণ ও টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যেমন আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে আছেন; তেমনি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও আতঙ্কে রয়েছেন। তারাও আশঙ্কা করছেন যেকোনো সময় তাদের নাম ফাঁস হয়ে যেতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, মহানগর পুলিশের সাবেক ওই কর্তার নির্দেশে পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যরা কয়েক বছর ধরে ক্যাসিনো ও ক্লাবগুলোর জুয়ার আসর পাহারা দিতে বাধ্য হয়েছেন।সূত্র : নয়াদিগন্ত

এমজে/