আবরার হত্যা: বহিষ্কার করে দায়িত্ব এড়াচ্ছে ছাত্রলীগ?

আবরার হত্যা: বহিষ্কার করে দায়িত্ব এড়াচ্ছে ছাত্রলীগ?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার দায়ে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা।

এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১১জন নেতাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলছিলেন, আমাদের দেশে এখন রাজনৈতিক আবহ যেমন সেখানে কেউ কোন দায় নিতে চায় না।

তিনি বলছিলেন, "আপনি যদি লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে দেখবেন বর্তমানে যে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলছে সেখানে প্রত্যেকে এমনকি উচ্চপর্যায়ের মানুষরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলেই আমরা এই অভিযানটা করছি। অর্থাৎ বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন যে বিষয়টা হয়েছে যে যেখানেই আছি প্রতিষ্ঠান হই, ব্যক্তি হই আমরা কেউ কোন দায়-দায়িত্ব নেই না"।

"যার ফলে দায়িত্ব এড়াবার বিরাট বড় সংস্কৃতির মধ্যে আমরা রয়েছি। সেই সংস্কৃতি সঞ্চারিত হয়েছে ছাত্রদের মধ্যেও"।

ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন ও নির্যাতনের অনেক ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার বার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।

যারা এরকম ঘটনার শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ যেমন আছেন, তেমনি নিজের দলের অনেক নেতা-কর্মীও রয়েছেন।

গণমাধ্যমে সমালোচনা-বিতর্কের ঝড় উঠলেও এসব ঘটনায় দায়ীদের খুব কম ক্ষেত্রেই বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।

সুলতানা কামাল বলছিলেন "তারা মনে করে যে যদি সে বলে সে ছাত্রলীগের সদস্য নয় অন্য জায়গা থেকে এসেছে। ধরে নিলাম তারা ছাত্রদল থেকে এসেছে, ধরে নিলাম তারা শিবির থেকে এসেছে। তাহলে তারা অপরাধ করার জন্য ছাত্রলীগের নাম নেয়, তার মানে এই ব্যাপারে ছাত্রলীগের অনুমোদন এবং প্রশ্রয় আছে"।

"এইসব কাজ যখন জনসম্মুখে চলে আসে তখন তারা বলার চেষ্টা করা ছাত্রলীগ কোন অন্যায় সহ্য করে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং এদেরকে আমরা বের করে দিচ্ছি"।

"তারা যে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হয়েছে যেজন্য তাদেরকে জবাবদিহিতায় নিয়ে আসা দরকার সেই দায়-দায়িত্বগুলো তারা পালন করতে চাইনা এটা তাদের সংস্কৃতিতেই নেই" বলছিলেন তিনি।

তিনি মনে করেন কেউ যদি ছাত্রলীগের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে তাহলে সে জানে যে তাকে কোন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে না।

ছাত্রলীগের উপর আওয়ামী লীগের কোন নিয়ন্ত্রণ আছে কি?
আওয়ামী লীগের নেতারাও এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন যে, ছাত্রলীগের বেপরোয়া কাজকর্মে তারাও বিব্রত।

সহযোগী এই সংগঠনের উপর আওয়ামী লীগের উপর কতটা নিয়ন্ত্রণ আছে এমন প্রশ্নে সুলতানা কামাল বলছিলেন, সহযোগী সংগঠনগুলোর উপর কোন নিয়ন্ত্রণ তো নেই বরং এদের দায়দায়িত্ব কিন্তু আওয়ামী লীগ নিচ্ছে না।

তিনি বলছিলেন, "যখনি তাদের বিরুদ্ধ অভিযোগ উঠে তখন আওয়ামী লীগও কিন্তু একই কথা বলে, তারা আমাদের সদস্য না, আমাদের সদস্য খাতায় এদের নাম ছিল না, এরা বাইরে থেকে এসেছে"।

"এদের অভিভাবক তো আওয়ামী লীগের সদস্যদের হওয়া উচিত। এদের মেন্টরিং করা এদের আওয়ামী লীগের আদর্শের সাথে পরিচিত করানো, সেখানে নিষ্ঠা তৈরির যে ব্যাপারটা রয়েছে। এরা এসমস্ত কাজ করছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নাম নিয়ে। তাহলে প্রশ্ন আসে বঙ্গবন্ধুর কোন আদর্শের পরিচয় রাখছে তারা? আর সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রেও কোন দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না", বলছিলেনে তিনি।

এমজে/