আমরা দুর্নীতিতে প্রচণ্ড উন্নয়ন করেছি: সুলতানা কামাল

আমরা দুর্নীতিতে প্রচণ্ড উন্নয়ন করেছি: সুলতানা কামাল

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, আমরা নিজেদের মর্যাদাটুকু বুঝি না। অন্যায় অবিচার হলে তার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি না, যার কারণে প্রত্যেকটি জায়গায় দুর্নীতিতে ভরে গেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেখানে বালিশ কিনতে লাগে ১৪ হাজার টাকা, আর বালিশের কভার কিনতে লাগে ৭ হাজার টাকা। তার মানে আমরা উন্নয়ন করেছি দুর্নীতিতে। দুর্নীতিতে প্রচণ্ড উন্নয়ন করেছি। এমনকি এলাকার জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দেওয়ার নামে প্রথম ছয় মাসের টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে আত্মসাৎ করে। এদেরকে এখন শুদ্ধি অভিযানে আনা দরকার।

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে প্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে জাতীয় পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ বাস্তবায়ন, বিদ্যমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নাসিমা আক্তার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদা আক্তার।

এসময় সুলতানা কামাল আরো বলেন, আমরা প্রত্যেকেই প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কতটা ভাবি, চিন্তা করি? আমরা তো বলে থাকি দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে। আমরা কি এই উন্নয়নের সঙ্গে মানবিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি? উন্নয়নের সঙ্গে সভ্যতাকে তাল মিলিয়ে চালাতে পারছি? তাহলে আমরা উন্নয়ন বলতে কী বুঝাতে চাচ্ছি? শুধু কি রাস্তা-ঘাট, ইমারত, ব্রিজ তৈরিকে উন্নয়ন বলি?

তিনি আরো বলেন, যদিও দেশে ক্যাসিনোর শুদ্ধি অভিযান চলছে। তবে অন্যদিকে ক্ষমতার দাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলছি। মানুষকে হয়রানি করছি। শেয়ারবাজার লুট করছি। এগুলো নিয়ে আমরা কিন্তু কোনো কথা বলছি না। সেই জায়গায় আমরা বিরাট উন্নয়ন করেছি।

এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ২০১৩ সালে দেশে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যে আইনটি পাস করা হয়েছে, সে আইনটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এর কারণ হলো প্রতিবন্ধীদের আমরা আন্তরিকতা সহকারে দেখি না। যারা বাস্তবায়ন করবে তারা সে আইনটি বাস্তবায়ন করছে না। যদিও প্রধানমন্ত্রী একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন কোনো কোটা থাকবে না। সেটার কি কোনো দলিল লিখিত প্রমাণ আছে? তারপরও কিন্তু আস্তে আস্তে কোটা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

সুলতানা কামাল বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একজনকে মাত্র ৭০০ টাকা মাসিক হারে ভাতা দেওয়া হয়, যা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। আবার এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ভাতা কার্ড দেওয়ার নামে সম্মানী হিসেবে প্রথম ছয় মাসের টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে আত্মসাৎ করে। এদেরকে এখন শুদ্ধি অভিযানে আনা দরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা শতকরা ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিসিএসসহ ১ম ও ২য় শেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে শতকরা ১ শতাংশ কোটা সুবিধা থাকলেও এখন তা বাতিল হয়ে গেছে। আইনের অধীনে এসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষাসহ ক্ষতিপূরণের আবেদন ও নিষ্পত্তির পর্যায় নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব বাদ দিয়ে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন হবে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

এমআই