স্বাধীন মত প্রকাশ করায় আবরারকে হত্যা করা হয়েছে: ড. কামাল

স্বাধীন মত প্রকাশ করায় আবরারকে হত্যা করা হয়েছে: ড. কামাল

মতপ্রকাশের কারণে কোনো নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা করা সংবিধানের ওপরে আঘাত বলে মন্তব্য করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যে কেউ তার মত প্রকাশ করতেই পারেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মাওলানা আকরাম খাঁ হলে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মহসীন রশিদ, মোকাববির খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন আহমেদ আফসারি, মোস্তাক আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারি হামিম প্রমুখ। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করে ড. কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত করে সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটন করতে হবে। এটা কোন দলীয় বক্তব্য নয়। ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে আমি এই দাবি জানাচ্ছি। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি আমরা কোনদিনই চাই না। তবে স্বাধীন ছাত্র রাজনীতি থাকতে পারে। আবরার হত্যাকাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে সাথে অন্যরাও থাকতে পারে।

দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনার দলের সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসময় একই প্রশ্নের উত্তরে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, আমি বারবার সংসদে দুর্নীতির বিরোদ্ধে প্রতিবাদ করেছি এখনও করছি এবং আমাদের সংসদ নেত্রীকে বারবার বলেছি যে আপনি শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের বিচার করুন। তিনি বলেন, দেশের শীর্ষ ১২ জন দুর্নীতিবাজকে যদি যুদ্ধাপরাধীদের মতো আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয় তারপরে যদি দেশের দুর্নীতির হার ৫০ শতাংশ কমে না যায় তাহলে আমাদের দলীয় প্রধানের অনুমতি নিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দুর্বত্তায়িত নেতাকর্মী এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তারা আজ ফ্র্যাঙ্ককেন স্টাইনের মতো আচরণ করছে । হলে হলে টর্চার সেল প্রতিষ্ঠা করেছে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজের আবাসিক হলগুলোতে রয়েছে টর্চার সেল। টার্গেটে থাকা শিক্ষার্থীকে টর্চার করার আগে দেয়া হয় বিরোধী কোনো সংগঠনের তকমা। এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, রাজনৈতিক ভন্ডামী ও কৌশলী প্রতারণা।

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেশ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। জনগণের মালিকানা জোরপূর্বক ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের কারণে আজ গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক নূন্যতম ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, এ অবস্থা থেকে দেশবাসী পরিত্রাণ চায়। দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত, ভন্ড, গণবিরোধী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে দেশে কার্যকর গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান তিনি।

 

এমজে/