আবরার হত্যা বাকস্বাধীনতায় নিষ্ঠুরতম আঘাত: টিআইবি

আবরার হত্যা বাকস্বাধীনতায় নিষ্ঠুরতম আঘাত: টিআইবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে বাকস্বাধীনতার ওপর নিষ্ঠুরতম আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

ছাত্রসংগঠন তথা শিক্ষাঙ্গনের ওপর দুর্বৃত্তায়িত অসুস্থ রাজনৈতিক প্রভাবের নিষ্ঠুর পরিণতি উল্লেখ করে অবিলম্বে বুয়েটসহ দেশের সব শিক্ষাঙ্গনকে সম্পূর্ণ দলীয় রাজনীতিমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এমন তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একের পর এক রক্তক্ষয়ী ছাত্র সহিংসতা, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবদুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা এবং একই কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যত নিষ্ক্রিয়তার ফলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আদর্শিক ছাত্র আন্দোলনের অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি।

টিআইবির মতে, আবরার হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সব ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষাঙ্গনকে সম্পূর্ণ দলীয় রাজনীতিমুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের যে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ও অবিস্মরণীয় ভূমিকা তাকে ম্লান করে দিচ্ছে ছাত্রসংগঠনের ওপর দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির নিষ্ঠুর প্রভাব।

এতে বলা হয়, ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী কর্তৃক বাকস্বাধীনতার ওপর নৃশংস আঘাতের সূতিকাগার রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের পরমত অসহিষ্ণুতা ও অসুস্থ একচ্ছত্রায়িত ক্ষমতার রাজনীতি, যা এক বিধ্বংসী তাড়নায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। আশা করি রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বশীল অংশ আমাদের এই উৎকণ্ঠার গভীরতা উপলব্ধি করতে পারবেন, অনুতপ্ত হবেন এবং শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও সর্বোপরি আইনের শাসন এবং প্রজন্মের কল্যাণ বিবেচনায় ছাত্রসংগঠনগুলোকে অসুস্থ রাজনীতির কালো থাবামুক্ত করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির বিকাশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলকে সত্যিকার অর্থেই সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত করতে আমূল সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।

গত রবিবার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়।

ওই কক্ষের আবাসিক ছাত্র বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোমবার বুয়েটে তদন্ত চালিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় আরও তিনজনকে। বৃহস্পতিবার অমিতসহ আরও দু'জন গ্রেফতর হয়।

এদিকে আবরার হত্যার পর বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অতীতের বিভিন্ন নির্যাতনের কথা উঠে আসছে। তাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বরসহ বিভিন্ন হলের একাধিক কক্ষ ও কমনরুমকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

এমআই