শতবর্ষে কিংবদন্তি আইনজ্ঞ টিএইচ খান

শতবর্ষে কিংবদন্তি আইনজ্ঞ টিএইচ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাক-ভারত উপমহাদেশে পৌনে দু’শ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে বৃটিশরা যখন পলায়নপর ঠিক তখনই আইন পেশায় দ্যোতি ছড়াতে আবির্ভাব এক তরতাজা যুবকের, যার নাম টিএইচ খান। দ্যোতি আর খ্যাতির সমান্তরাল রেখায় ছুটে চলা এই জীবন্ত কিংবদন্তি আজ পা রাখলেন শতবর্ষে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম আইনবিদ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিচারপতি টি এইচ খান ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। একই বছর ২৭ নভেম্বর সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে প্রধান বিচারপতি সালেহ আকরামের নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারপতি নিয়ে যে দিন ঢাকা হাইকোর্টের যাত্রা শুরু হয় সে দিন থেকে বিচারপতি টি এইচ খান একজন আইনজীবী হিসেবে সেই আদালতে (বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট) পদচারণা শুরু করেন। তার সেই অভিযাত্রা আজও অব্যাহত রয়েছে।

বর্তমানে তিনি দেশের প্রবীণতম কর্মরত আইনজীবী। আজকের দিনটি তিনি তাঁর মোহাম্মদপুরস্থ বাসভবনে কাটাবেন বলে জানান তাঁর ছেলে সাংবাদিক আফজাল এইচ খান। তিনি তাঁর পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

বিচারপতি টি এইচ খান নামে তিনি সমধিক পরিচিত হলেও তার প্রকৃত নাম তাফাজ্জাল হোসেন খান।

টি এইচ খান ১৯৬৮ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাস থেকে আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার হন তিনি।

বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভার জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯৫ সালে বিচারপতি টি এইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তথা রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচারকার্য পরিচালনা করে দেশে ফিরে আসেন। আবার আইন পেশা শুরু করেন তিনি।

আইন পেশা ছাড়াও প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন টি এইচ খান।

বিচারপতি টি এইচ খানের ১০০তম জন্মদিন উপলক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা আজ সন্ধ্যায় তার বাসভবনে যাবেন তাকে শুভেচ্ছা জানাতে।

বার্ধক্যজ্বনিত কারণে এখন আর তেমন একটা আদালতে যাচ্ছেন না সুপ্রিম কোর্টের এই প্রবীণতম বিজ্ঞ আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান।

জিএস/