সরকারের অঘোষিত অবরোধ

সরকারের অঘোষিত অবরোধ

ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বুধবার ধানমন্ডি এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে এমন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক উদ্বিগ্নকণ্ঠে জানতে চাইলেন আজ বৃহস্পতিবার স্কুল খোলা থাকবে কি না? খোলা থাকলেও তাঁর মেয়েকে পাঠানো ঠিক হবে কি না? এই উদ্বেগ প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের। ভয়ে অভিভাবকেরা নাহয় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠালেন না। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কী হবে? তাদের তো ঝুঁকি নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হবে।

স্কুল খোলা থাকলে শিক্ষার্থী স্কুলে যাবে, পরীক্ষা থাকলে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকারের দায়িত্ব স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশব্যাপী যে ব্যাপক ধরপাকড়-তল্লাশি চালাচ্ছে, তাতে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুধু ব্যাহত হয়নি, ঢাকা শহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষও ভয়ভীতিতে আছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়ে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর চারটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় ছুরি, চাকু, ছড়ি ও লাঠি হাতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

গত কয়েক দিনে ঢাকার বাইরে যানবাহনে যেভাবে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে আমরা এক অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে সময় পার করছি। পুলিশ ঢাকার আবাসিক হোটেল, মেস, বাসেও তল্লাশি চালাচ্ছে। রাজধানীর প্রবেশমুখে বাসে তল্লাশি চালিয়ে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকদের পরীক্ষা করে দেখছে, তারা অপরাধী কি না। রামপুরার একটি মেস থেকে সোমবার রাত ১২টায় সাতজনকে ধরে নেওয়া হয়, যাঁদের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দুজন তরুণ প্রকৌশলীও ছিলেন। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যেসব আটক ব্যক্তি কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন না বা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি, তাঁদের ঠিকানা হয়েছে থানার হাজতখানা।

যেকোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যেমন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঢাকা শহরে মন্ত্রী-এমপি-আমলাদের বাড়ি আছে। কিন্তু যাঁদের বাড়ি নেই কিংবা কোনো ফ্ল্যাট-বাসা ভাড়া করার সামর্থ্যও নেই, তাঁরাই নিরুপায় হয়ে মেসে থাকেন। কেবল মেসবাড়ি নয়, পুলিশের তল্লাশি অভিযান থেকে আবাসিক হোটেলগুলোও রেহাই পাচ্ছে না। চিকিৎসা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে প্রতিদিন লাখ লাখ লোক ঢাকায় আসেন, দিনে দিনে ফিরে যেতে না পারলে তাঁরা হোটেলে থাকেন। সরকার পাইকারিভাবে তাঁদেরও সন্দেহের তালিকায় রেখেছে এবং তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১১২৮ঘ.)