ফৌজদারি ব্যবস্থা দিয়ে দুর্নীতি দূর করার সীমাবদ্ধতা অনেক: সিপিডি

ফৌজদারি ব্যবস্থা দিয়ে দুর্নীতি দূর করার সীমাবদ্ধতা অনেক: সিপিডি

ফৌজদারি ব্যবস্থা দিয়ে দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘২০১৯-২০ অর্থবছর: প্রারম্ভিক মূল্যায়ন’ শীর্ষক সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যদি মনে করেন ফৌজদারি ব্যবস্থা দিয়ে সরকার দুর্নীতি দূর করবে, আমি মনে করি এটার সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি। আমরা চাচ্ছি অর্থনীতিতে সংস্কার, যাতে করে নেতিবাচক কার্যক্রম উৎসাহিত না হয়। আপনি একদিকে অন্য ধরনের কার্যক্রম উৎসাহিত করবেন– (ব্যাংকের) টাকা ফেরত দেবে না, ট্যাক্স দেবে না, ঘুষ খাবে; আবার অন্যদিকে শুধু ক্যাসিনো বন্ধ করতে চাইবেন– এটা একটার সঙ্গে আরেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিচার-বিশ্লেষণের জায়গা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তথ্য-উপাত্তের লভ্যতা ক্রমান্বয়ে দুস্কর হয়ে যাচ্ছে। যে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত আমরা পাচ্ছি তা চলমান সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না। তারপরও যেসব তথ্য উপাত্ত আসছে তার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও সাম্প্রতিককালে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত না থাকলে অর্থনীতির ভেতরে বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্বচ্ছতার অভাববোধ তৈরি হয়। আমাদের ধারণা, এই স্বচ্ছতার অভাব আক্রান্ত করে নীতি নির্ধারকদের। কারণ ওনারা যে সিদ্ধান্ত নেন তা এই তথ্য-উপাত্ত দ্বারা আলোকিত কিনা, যদি না হয় তাহলে সিদ্ধান্তে ভ্রান্তি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। উপরন্তু তাদের বিভিন্ন নীতির ফলাফল সম্পর্কেও তারা অবহিত হওয়ার সুযোগ পান না। তার ফলে নীতির সংস্কারেরও ক্ষেত্রেও তারা অনেকখানি পিছিয়ে যান। সে কারণে আমরা মনে করি তথ্য-উপাত্তের অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার নিজে, নীতি-নির্ধারকরা নিজে। নিঃসন্দেহে নাগরিকরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘তথ্য-উপাত্তের অভাবে আমরা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যার মধ্যে যাচ্ছি, যার কোনো তথ্য-উপাত্তের নির্ভরতা নাই। সেহেতু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে, যুক্তির ভিত্তিতে যে বিচার-বিশ্লেষণ করবো সে জায়গাটা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এটাকে একটা বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে আমরা দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে গতিশীলতা, যে সংযুক্তি, যে সমন্বয় দরকার সেটার ক্ষেত্রে আমরা অভাব অনুভব করছি। এখন আপনি যদি দেখেন তাহলে দেখবেন খুব বড়ভাবে একটা একনীতিকেন্দ্রীক ব্যবস্থাপনা চলছে। অর্থাৎ সরকার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগনীতি ভিত্তিক একটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্রবেশ করেছে। পুরোটাই হলো রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো বিনিয়োগ। এটার সাথে ব্যক্তি বিনিয়োগের সম্পর্ক খুবই দুর্বল। এটার সাথে রাজস্ব আদায়ের সম্পর্ক খুবই দুর্বল। এটার সাথে মুদ্রানীতির, টাকার মূল্যমানের যে ওঠানামা সেটার সঙ্গেও সম্পর্ক খুব দুর্বল। এটার সঙ্গে অন্যান্য বাণিজ্য নীতিরও সম্পর্ক অত্যন্ত দুর্বল। অর্থাৎ এই যে সামষ্টিক অর্থনীতি বা উন্নয়ন অর্থনীতির নেতৃত্বমূলক ভূমিকা যে অর্থ মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে সেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বমূলক ভূমিকার ক্ষেত্রেও আমরা কিছুটা অভাব অনুভব করছি।’

ড. দেবপ্রিয় আরো বলেন, ‘নীতির সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত কেন্দ্রায়িত হচ্ছে। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের পর্যায় থেকে, আরো উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, যার ফলে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে অথবা একটি একক নীতি নির্ধারক জায়গা হিসেবে মন্ত্রণালয়গুলোর ভূমিকাগুলো ক্রমান্বয়ে গৌণ হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’ এসব কারণে এক ধরনের অস্বীকৃতির মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করে সিপিডির সম্মানিত এই ফেলো।