আমাকে যারা ব্যবহার করেছে এখন কেউ পাশে নেই: জি কে শামীম

আমাকে যারা ব্যবহার করেছে এখন কেউ পাশে নেই: জি কে শামীম

যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ও টেন্ডার কিং জি কে শামীমের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে দুদকে। সোমবার সকালে তাকে দুদক কার্যালয়ে আনা হয়েছে। রবিবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

কীভাবে এত কাজ পেতেন, কারা সহায়তা করেতেন, কাকে কত পার্সেন্ট দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন- শামীমকে এমন অসংখ্য প্রশ্ন ছিল দুদক কর্মকর্তাদের। জবাবে শামীম বলেছেন, অনেকেই আমাকে প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন। এখন তারা কেউ আমার পাশে নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রবিবার দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. সালাহউদ্দিন দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদক কর্মককর্তাদের প্রশ্নের জবাবে জি কে শামীম বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে তার সঙ্গে অনেকেরই ভালো যোগাযোগ ছিল। অনেক নেতাই তার অফিসে নিয়মিত যেতেন। তাদের সহায়তাও নিতেন তিনি। তিনি স্বীকার করেছেন, নেতাদের সহায়তা না পেলে তিনি এতদূর আসতে পারতেন না। অনেকেরই আশীর্বাদ ছিল তার ওপর। ঠিকাদারি কাজ পেতে অনেকেরই সহায়তা পেয়েছেন তিনি।

বিনিময়ে কোনো নেতাকে কত টাকা দিয়েছেন তা তিনি খুলে বলতে চাননি। তবে এটুকু বলেছেন, নেতাদের অনেকেই তাকে তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন। এখন কেউ পাশে নেই। মধু খাওয়া সেসব নেতাদের তিনি নষ্ট মানুষ বলেও মন্তব্য করেন বলে জানা গেছে।

জি কে শামীম এ-ও বলেছেন, নিয়মের মধ্যে থেকেই কাজ পেয়েছেন। নিয়ম ভেঙে তাকে কাজ দিলে আগেই অনেক সমালোচনা হতো। অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে জি কে শামীম বলেন, তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ আয়কর নথিতে দেখানো আছে। এর বাইরে যে সম্পদ পাওয়া যাবে সে অভিযোগে মামলা হলে তিনি শাস্তি মাথা পেতে নেবেন।

সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানে ২০ সেপ্টেম্বর নিকেতনের কার্যালয় জি কে বিল্ডার্স ভবন থেকে জি কে শামীমকে আটক করে র‌্যাব। পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচার আইনে তিনটি মামলা করা হয়।

মামলার এজাহারে শামীমকে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক ও জুয়ার ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর শামীমের অস্ত্র ও মাদক মামলায় পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার জিকে শামীমের সাত দেহরক্ষীকে অস্ত্র মামলায় রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

অস্ত্র মামলা ও মাদক মামলার এজাহারে বলা হয়, শামীমের দেহতল্লাশি করে তার নামে একটি এনপিবি দশমিক ৩২ বোরের পিস্তল, ৪৭ রাউন্ড গুলি ও তিনটি গুলির খোসা পাওয়া যায়। তার সাত দেহরক্ষীর প্রত্যেকের কাছ থেকে কালো রঙের দশমিক ১২ বোরের একটি শটগান পাওয়া যায়।

আর দেহরক্ষী মো. দোলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে সাতটি কার্তুজ, মো. মুরাদ হোসেনের কাছ থেকে ১০টি কার্তুজ, মো. জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে তিনটি কার্তুজ, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ১০টি কার্তুজ, কামাল হোসেনের কাছ থেকে ১০টি কার্তুজ, সামসাদ হোসেনের কাছ থেকে ২৩টি কার্তুজ ও আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে ১০টি কার্তুজ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এ ছাড়া শামীমের বাড়ির তৃতীয় তলার অফিসকক্ষের ফ্রিজের ভেতর তার দখল ও হেফাজতে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাঁচ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়, যার মূল্য আনুমানিক ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা।