দিল্লিকে ছাড়িয়ে বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ঢাকা

দিল্লিকে ছাড়িয়ে বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ঢাকা

রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বুধবার ও গত মঙ্গলবার বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে তালিকার একনম্বরে ছিল ঢাকা। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ও তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তানের লাহোর। এ ছাড়া সার্বিক দিক থেকে দূষিত রাজধানীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে বছরে প্রায় ২শ দিন ঢাকার বায়ু মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে।

‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে অন্তত ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গড় আয়ু প্রায় ১ বছর ৩ মাস কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণযুক্ত পরিবেশে কোনো শিশু বেড়ে উঠলে তার গড় আয়ু ৩০ মাস (২.৫ বছর) পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এ ছাড়া স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের মতে, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ লোক কোনো না কোনোভাবে বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যায়, গত চার বছর ধারাবাহিকভাবে ঢাকায় দূষণের সময় বাড়ছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর বাতাস দূষিত থাকে। সবচেয়ে বেশি দূষণ থাকে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু গত দুই বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, মার্চ ও এপ্রিলের বাতাসও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মতো খারাপ থাকছে। পরিবেশ গবেষক আতিক আহসানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ১৬৫ দিন ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর থেকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর ছিল। ২০১৫ সালে তা বেড়ে ১৭৩ দিন, ২০১৬ সালে ১২৯ দিন, ২০১৭ সালে ১৮৫ দিন ও ২০১৮ সালে ১৯৭ দিনে গিয়ে দাঁড়ায়। এ দূষিত বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। এশিয়ার বায়ুর গুণমান অনেক খারাপ, বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণ ১৯৯০ সাল থেকে পিএম ২.৫ মাত্রার মধ্যে বসবাস করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ার কোয়ালিটি রিচার্স অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের প্রকল্প ম্যানেজার এবং মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসেন বলেন, দেশে ক্ষুদ্র কণিকার মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি। এ বায়ুদূষণ রোধে দৃশ্যমান নয় সরকারের উদ্যোগ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যেমন দক্ষ ও তৎপর নয়, তেমনি দূষণ পরিমাপে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাও তত আধুনিক নয়। সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই বললেই চলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজধানীতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও বেসরকারি বৃহৎ অবকাঠামোতে পরিবেশ দূষণ রোধে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু কেউই এতে তেমন সাড়া দেয়নি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশের উৎস মহানগরীর আশপাশে স্থাপিত ইটভাটা। এ ছাড়া রাস্তাঘাটের ধুলা, মোটরগাড়ি ও কারখানার দূষণ মিলে ২৬ শতাংশ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে পাঁচ বছর আগেও বায়ুদূষণে ওই তিন খাতের অবদান ছিল ১৫ শতাংশ।

এমজে/