কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন

১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি, বরখাস্ত প্রকল্প পরিচালক

১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি, বরখাস্ত প্রকল্প পরিচালক

পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজটি মুখ থুবড়ে পড়েছে এর প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও অদক্ষতার কারণে। তার জন্য সরকারের অপচয় হতে যাচ্ছে শতকোটি টাকার বেশি। রানওয়ে সম্প্রসারণসহ বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও এ কাণ্ড ঘটেছে। এসব কারণে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আমিনুল হাসিবকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নিচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেবিচক সূত্র জানায়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ তদন্তের পর বেবিচক তাকে বরখাস্ত করার জন্য নির্দেশনা দেয়। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হাসিবের দুর্নীতির চিত্র। তিনি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চাহিদা মোতাবেক অর্থ যথাসময়ে জমা না দেওয়ায় সরকারের কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে হাসিবের দায়িত্ব ছিল নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট তহবিলে জমা প্রদান করা। কিন্তু তার দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণে নির্ধারিত সময়ে অধিগ্রহণ কেসের অর্থ জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত খাতে জমা প্রদান না করায় ভূমি অধিগ্রহণ কেসটি আইনানুগভাবে বাতিল হয়েছে। এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ পুরাতন অধিগ্রহণ আইনের আওতায় হওয়ায় ভূমি ক্ষতিপূরণ বাবদ জমির দেড়গুণ অর্থ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু অধিগ্রহণ কেসটি বাতিল হওয়ায় তা ২০১৭ সালের আইনের আওতায় সম্পন্ন করতে হবে। এর কারণে জমির মূল্য তিন গুণ এবং এ সময়ে ওই এলাকায় জমির বর্ধিত মূল্যের হারে পরিশোধ করতে হবে। ফলে এ খাতে সরকারের কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। তিনি স্থানীয় ভূমি মালিক ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মচারীর যোগসাজশে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণের জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ধরনের কাজ করেছেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আমিনুল হাসিব স্পেসিফিকেশন অনুসারে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ৩৭ কোটি টাকা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেননি। তার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে এ প্রকল্পের কার্যক্রমে মারাত্মক ত্রুটি হয়েছে।

এ ছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ডিপিপি গত বছরের ৪ নভেম্বর সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর এক বছরেও তিনি প্রকল্পের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে না পারার ব্যর্থতায় তার বিরুদ্ধে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর চাকরি প্রবিধানমালা-১৯৮৮ এর ৩৯(ক), ৩৯(ঘ), ৩৯(ঙ) এবং ৩৯(চ) ধারায় বর্ণিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অদক্ষতা, দুর্নীতিপরায়ণতা এবং আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ১০০ কোটি টাকা অপচয় ও দুর্নীতির দায়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ জন্য পিডি মো. আমিনুল হাসিবকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে শুধু অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইনস পরিচালনার সুবিধা আছে। আন্তর্জাতিকমানের কোনো সুবিধা না থাকায় ঢাকা হয়ে কক্সবাজারে যেতে হয় বিদেশি পর্যটকদের। তারা যেন সরাসরি যেতে পারে, সে লক্ষ্যে বিদ্যমান টার্মিনাল ভেঙে প্রায় ১০ একর জমিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আদলে দোতলা টার্মিনাল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই সময়ে ৫০০ যাত্রীর দেশের বাইরে যাওয়া-আসাসহ বোয়িং ৭৭৭-এর মতো বড় উড়োজাহাজ অবতরণের সব ধরনের অবকাঠামোও তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে নিয়োগ পান হাসিব। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ আসে।

এমজে/