উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনা

মন্ত্রী দেখছেন নাশকতা, তদন্ত কমিটির চোখে লাইনে ত্রুটি

মন্ত্রী দেখছেন নাশকতা, তদন্ত কমিটির চোখে লাইনে ত্রুটি

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার পর বগিতে আগুন লাগা নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনার পর বগির ভিতরে আগুন লাগার ঘটনাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা নাশকতা হিসেবে সন্দেহ করছেন।

গতকাল শুক্রবার বিকাল চারটায় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এ সন্দেহ প্রকাশ করেন। দুর্ঘটনার পর ইঞ্জিনের আগুন কীভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগির ভিতরে ঢুকল এটা ভাবনার বিষয়-মন্তব্য মন্ত্রীর।

এ দিকে দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের কমিটি কাজ শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে পাঁচ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সিগন্যালে কোনো ত্রুটি ছিল না। তবে লাইনে ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফিরোজ মাহমুদ ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তবে এই রেল দুর্ঘটনার কারণ এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘এর আগে ২০১৪ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে এই এলাকায় একটি ট্রেন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনি ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটেছে কিনা তার তদন্ত চলছে।’ দুর্ঘটনার ২৬ ঘণ্টা (শুক্রবার বিকাল ৪টা) পার হলেও লাইন মেরামত ও সংস্কারের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, রেল সচিব মোফাজ্জল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব ফারুকুজ্জামান, পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি ভৌমিক, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুজ্জামানসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

রেল সচিব মোফাজ্জল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ইতিমধ্যেই চারটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই দুর্ঘটনার আসল কারণ উদঘাটন করা যাবে।

বৃহস্পতিবার এই লাইনে যারা সংস্কার কাজ করছিল তাদের দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটকরা হলেন, কালীগঞ্জ গ্রামের আরিফ হোসেন ও মাটি কোড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক।

এ দিকে রেলের একটি সূত্র ধারণা করছে, সংস্কারের কাজে নিয়োজিতরা উল্লাপাড়া স্টেশনে ঢোকার সম্মুখ পয়েন্টে বেসপ্লেট খুলে রাখা হয়েছিল। যে কারণে ওই দুজনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ ও সহকারী পরিচালক মিয়া জাহানসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলস্টেশন এলাকায় আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং আগুন ধরে ৩টি বগি পুড়ে যায়।

এ দিকে শুক্রবার রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের পর থেকেই বিভিন্ন স্টেশনে ১ ঘণ্টার উপরে যাত্রা বিরতি দিয়ে ফেলে রাখা হয়। দুপুর ১টার দিকে ট্রেনটি উল্লাপাড়ার লাহিড়ীমোহনপুর স্টেশনে প্রায় চার ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এ সময় ট্রেনের শতশত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়ে। বিশেষ করে নারী শিশু ও বয়স্করা ভোগান্তিতে পড়ে বেশি। এ সময় অনেক বগির যাত্রীরা ট্রেনের মধ্যে হৈচৈ শুরু করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে অবস্থানরত রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ট্রেনটি দ্রুত উল্লাপাড়ায় নিয়ে আশার নির্দেশ দেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকাল ৫টা) ট্রেনটি লাহিড়ীমোহনপুর থেকে ছেড়ে এসে উল্লাপাড়া আউট সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল।

এমআই