ভারত থেকে কারা আসছে বাংলাদেশে?

ভারত থেকে কারা আসছে বাংলাদেশে? গত মাসে অবৈধ বাংলাদেশী সন্দেহে ব্যাঙ্গালোরে ধৃতদের কয়েকজন - ছবি : সংগৃহীত

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে হঠাৎ বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে কিছু নারী-পুরুষ-শিশু। ভারত থেকে আসা এই লোকগুলোকে ‌‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে আটক করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। এরপর তাদের তুলে দেয়া হয়েছে স্থানীয় পুলিশের হাতে।

বিজিবির কর্মকর্তার বলছেন, ভারতে এখন কথিত ‘অবৈধ অভিবাসনের’ বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, তারপর থেকেই এ ধরণের লোকজন বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে।

বিজিবি এটিকে বাংলাদেশে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ হিসেবে দেখছে। এজেন্য এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন গ্রামে গ্রামে ইউপি সদস্যদের দিয়ে কমিটিও গঠন করছে।

তবে স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে একেবারে ভিন্ন ভাষ্য। পুলিশ আটকদের অনুপ্রবেশকারী বলতে রাজি নয়। পুলিশ বলছে, তদন্ত করে তারা দেখেছে আটক ব্যক্তিরা আসলে বাংলাদেশেরই মানুষ।

এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটকদের মধ্যে প্রায় ৮০ জন নারী এবং ২০টি শিশু রয়েছে বলে বিজিবি'র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, আটকদের বেশিরভাগই মুসলিম।

নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ১০জন বা ১৫জনের দলে ২/৩টি করে পরিবার বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করে।

মহেশপুর থেকে বিজিবি'র সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল কামরুল আহসান বলছিলেন, ভারতের এনআরসির ভয়ে এই অনুপ্রবেশের চেষ্টা হচ্ছে, আটকের সাথে কথা বলে তারা এই তথ্য পেয়েছেন।

‘হঠাৎ করে এ মাসে প্রায় সোয়া দু'শ'র মতো আমাদের হাতে ধরা পড়েছে, যারা ভারত থেকে এসেছে। এরা মূলত ব্যাঙ্গালোর বা চেন্নাইয়ের মতো জায়গা থেকে আসছে। কর্নাটকে এনআরসির কার্যক্রম শুরু হবে, এরকম একটা কথা সেখানে চালু হয়েছে। সেজন্য পুলিশ এবং বিজেপি সমর্থকরা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছিল যে, তোমরা এদেশ ছেড়ে যাও। সেকারণে তারা গোপনে চলে আসছে।’

তিনি আরো জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারিরা ভারতের নদীয়া জেলা দিয়ে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্তের কাছে এসে থাকছে এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। সীমান্তের দুই পাশেই দালালচক্র বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে তাদের সাহায্য করছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

মহেশপুর উপজেলার ইউএনও'র দায়িত্বে থাকা সুজন সরকার জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য বিজিবির অনুরোধে তাদের সহায়তা করতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে কমিটি করা হচ্ছে।

সীমান্তের কাছের কাজী বেড় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নাসিমা খাতুন বলছিলেন, আটকদের মধ্যে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর কেউ নেই।

‘যাদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দিছে, তারা গোপনে আসছে। কিন্তু আমাদের এবং আশপাশের গ্রামের কেউ এর মধ্যে নেই।’

সীমান্তবর্তী আরেকটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সায়রা খাতুন বলেছেন, সীমান্তে আটকের পর আদালতে পাঠানোর আগে তার বাড়িতেও কয়েকজন নারী শিশুকে রাখা হয়েছিল।

সেই নারীদের বরাত দিয়ে সায়রা খাতুন বলেছেন, ‘তাদের কেউ কেউ বলছে, তারা কাজের জন্য যায়। আবার কেউ বলেছে, তাদের ভালো কাজ দেয়ার লোভ দিয়া নিয়া যায়। তারপর দেহব্যবসা করে। এখন আর থাকতে না পেরে চলে আসছে।’

আটকের পর তাদের কী করা হচ্ছে
বিজিবি’র কর্মকর্তা লে: কর্ণেল কামরুল আহসান বলেছেন, আটকদের কাছে কোনো দেশের পাসপোর্ট না থাকায় পার্সপোট আইনে এবং অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাদেরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ আদালতে হাজির করলে তাদের স্থানীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেছেন, আটকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার নাগরিক হিসেবে দাবি করলেও কোন তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি। সেজন্য বিজিবি তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখছে। আর এমন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ঝিনাইদহ সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন।

মহেশপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রাশেদুল আলম বলছিলেন, আটকরা বাংলাদেশের নাগরিক বলে তদন্তে তারা প্রমাণ পেয়েছেন। সেকারণে এটাকে তারা অনুপ্রবেশ হিসেবে দেখছেন না।

‘আটকদের বেশিরভাগের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ,শরণখোলা এলাকায়। এছাড়া কয়েকজন বাড়ি হচ্ছে পিরোজপুরের প্রত্যাশী ইউনিয়নে। ঐ এলাকাগুলো থেকে ব্যাঙ্গালুরু যায় কাজের জন্য। কিছু বেদেও এসে আটক হয়েছে। এরা সবাই ব্যাঙ্গালুরু থেকে এসেছে। তারা কোনো এক সময় অবৈধভাবে ইন্ডিয়ায় গিয়েছিল।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি এটাকে অনুপ্রবেশ বলবো না। যেহেতু তারা এদেশের নাগরিক। তারা নাম পরিচয় যা বলেছে, তদন্তে আমরা তার সত্যতা পেয়েছি।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা তদন্তে যে তথ্য পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে এখন অল্প সময়ের মধ্যে আটকদের বিরুদ্ধে পার্সপোর্ট না থাকার অভিযোগে চার্জশিট দেবেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।