কয়লা আমদানিতে ১০ ভাগ মূসক ছাড়ের সিদ্ধান্ত অপিরণামদর্শী: টিআইবি

কয়লা আমদানিতে ১০ ভাগ মূসক ছাড়ের সিদ্ধান্ত অপিরণামদর্শী: টিআইবি

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য কয়লা আমদানিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১০ ভাগ মূসক ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তাকে অপিরণামদর্শী বলছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমানোর যুক্তিতে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলা হলেও তার সুফল শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে কী না, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বাধ্যবাধকতা নিশ্চিতের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর ঢাকা কার্যালয় থেকে শনিবার পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

পরিবেশ বিধ্বংসী হওয়ার পরও সরকার যেভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্রমাগত ঝুঁকে পড়ছে, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘কয়লা থেকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার যে যুক্তি দেখিয়ে এর ওপর আত্মঘাতী নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় কয়লা আমদানিতে মূসক ছাড়ের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত। এটি সরকারের জাতীয় অঙ্গীকার, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও প্যারিস চুক্তির পরিপন্থি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা জানি, সরকারের অঙ্গীকার আছে ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ১০ শতাংশ। অথচ বর্তমানে এ হার ৪ শতাংশেরও কম। একইসাথে, সরকার অঙ্গীকার করেছিল যে, ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে নাবয়নযোগ্য পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। কিন্তু তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় কর সুবিধাসহ তেমন কোনো কৌশলগত ও কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।’

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মূসক ছাড়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি খরচ কমানোর যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে সেটি সাধারণ মানুষের কাছে কতটা পৌঁছাবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ড. জামান বলেন, ‘মূসক ছাড়ের ফলে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমে আসার সুফল কতটা গ্রাহকরা পাবেন সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ। কেননা ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতেও সরকার একই ধরনের কর ছাড় দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সুবিধাটি পকেটে পুরেছেন এসব কেন্দ্রের বেসরকারি উদ্যোক্তারা। তাছাড়া, সরকার যখন রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য মরিয়া তখন এরকম পরিবেশ বিধ্বংসী খাতে কীভাবে এতো বড় ধরনের মূসক ছাড় গ্রহণযোগ্য হতে পারে তা বোধগম্য নয়। এমন সুবিধা যদি দিতেই হয় তবে এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎ পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত হবে, এরূপ শর্ত সাপেক্ষে কার্যকর বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সারাপৃথিবী যখন পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লানির্ভর জ্বালানি থেকে সরে আসতে কার্বন কর বসাচ্ছে সেখানে কয়লা আমদানিতে কর ছাড় জলবায়ু ঝুঁকির মুখে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের জন্য পশ্চাৎমুখী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশকে কয়লা উৎপাদন কেন্দ্রের ভাগাড়ে পরিণত করার স্বার্থান্বেষী দেশিয় ও আন্তর্জাতিক মহলই লাভবান হবে। অন্যদিকে নিরুৎসাহিত হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার। আমরা এরূপ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাই।’

এমজে/