‘ভাড়া কক্ষ’ উদ্ধার নিয়ে হল ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

‘ভাড়া কক্ষ’ উদ্ধার নিয়ে হল ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

টাকার বিনিময়ে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে হলে থাকতে দেন বলে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ কক্ষটি ‘উদ্ধার’ করতে গেলে দরজা আটকে দেন ওই বহিরাগত। ধাক্কাধাক্কির মুখে দরজা খুলতেই তাকে পেটাতে শুরু করেন ‘উদ্ধারকারী’ পক্ষের নেতা-কর্মীরা। পরে খবর পেয়ে সেই ছাত্রলীগ নেতা নিজের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রড, লাঠিসোঁটাসহ ছুটে এলে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে (এসএম হল) এ ঘটনা ঘটে। কক্ষ ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ ওঠা ওই ছাত্রলীগ নেতা হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক মিলন খান। আর ‘উদ্ধারকারী’ পক্ষটির নেতৃত্ব দেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) জুলিয়াস সিজার তালুকদার।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এসএম হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, হলের ১৫২ নম্বর কক্ষে মিলন খানকে মাসিক ভাড়া দেওয়ার বিনিময়ে তার সঙ্গে মো. সুজন নামের বহিরাগত এক ব্যক্তি তিন বছর ধরে থাকছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর জুলিয়াস সিজার তালুকদারের অনুসারীরা ওই বহিরাগতকে কক্ষ থেকে তাড়িয়ে কক্ষটিতে নিজেদের পক্ষের কোনো কর্মীকে ওঠানোর পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী আজ বিকেলে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ওই কক্ষে যান সিজার। মিলন তখন কক্ষে ছিলেন না।

সূত্র জানায়, সিজার ও তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের দেখে ভেতর থেকে কক্ষের ছিটকিনি আটকে দেন বহিরাগত সুজন। বাইরে থাকা ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলে একপর্যায়ে তিনি দরজা খোলেন। দরজা খুলতেই উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা সুজনের ওপর হামলে পড়েন। তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। তারা সুজনের বিছানা ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র কক্ষ থেকে বের করে দেন। খবর পেয়ে নিজের পক্ষের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রড, লাঠিসোঁটাসহ ঘটনাস্থলে ছুটে যান মিলন খান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) কামাল উদ্দিন ও হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। হলের আবাসিক শিক্ষকেরা বহিরাগত সুজনকে হল থেকে বিতাড়িত করেন। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে সুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ঘটনার বিষয়ে হল সংসদের জিএস ও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হল প্রশাসন এর আগে হল থেকে বহিরাগতদের বিতাড়িত করলেও কিছু বহিরাগত রয়ে গেছে। মিলন খানের কক্ষে একজন স্বীকৃত বহিরাগত ভাড়ার বিনিময়ে তিন বছর ধরে থাকছে। আজ বিকেলে আমরা ওই কক্ষে গেলে বহিরাগত সুজন প্রথমে দরজা আটকে দিলেও শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কির মুখে দরজা খুলে দেয়। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তখন তাকে হালকা আঘাত করেন। পরে মিলন রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসেন। হলের শিক্ষার্থী ও আবাসিক শিক্ষকেরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। অন্য নেতাদের মতো হলে আমার কোনো রাজনৈতিক গ্রুপ নেই। আমি গ্রুপিং রাজনীতি পছন্দ করি না।’

আর হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক ও ছাত্রলীগ নেতা মিলন খান বলেন, বহিরাগত সুজন তার পরিচিত। তিনি এলাকায় রাজনীতি করেন। মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে থাকেন। টাকার বিনিময়ে সুজনকে হলে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সত্য নয়। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বির রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি সমাধান হয়ে গেছে। তবে প্রকৃত ঘটনাটি কী, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অনেক বহিরাগত ও অছাত্র এসএম হলে থাকছেন। হলটির প্রাধ্যক্ষ এ ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দিচ্ছেন। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, অছাত্র-বহিরাগতদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ ব্যবস্থা নেবে। কারও বিরুদ্ধে অছাত্র-বহিরাগতদের পৃষ্ঠপোষকতার ন্যূনতম অভিযোগ থাকলে তাঁদের আসন্ন হল কমিটি কিংবা ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে রাখা হবে না।

এমজে/