বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়তে যাচ্ছেন অমিত শাহ!

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়তে যাচ্ছেন অমিত শাহ!

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল ২০১৯-এর প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে ভারত। বিলের প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভে নেমেছে সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিলটি ভারত পার্লামেন্টে পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারেন বিল উত্থাপনকারী দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ অন্যান্য প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ।

সোমবার ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এক কড়া বার্তা প্রকাশ করেছে ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)।

ইউএসসিআইআরএফ এর নিজস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, "ভারত যে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল উত্থাপন করেছে তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ইউএসসিআইআরএফ। ধর্মের উপর ভিত্তি করে দেশটির লোকসভায় মূলত বিলটি উত্থাপন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদি বিলটি রাজ্যসভাতে পাস হয় তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত এবং অন্যান্য প্রভাবশালী নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় থাকবে।"

সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডেমন্ট বিল বা সিএবি নামে পরিচিত এই বিতর্কিত বিলটির মাধ্যমে মুসলিমদেরকে বিচ্ছিন্ন করার রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, " নাগরিকত্ব সংশোধন বিলটি ভুল পথে বিপদকে টেনে আনার নামন্তর। এই বিলটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ইতিহাস আর সংবিধানের সঙ্গে মোটেই খাপ খায়না। আর আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের সমতার যে বিষয়টি দেশটিতে রয়েছে তাকেও খর্ব করে দিচ্ছে।"

এতে বলা হয়, "ভারতে আসাম রাজ্যের এনআরসি নিয়ে তৈরি জটিলতা এবং দেশব্যাপী নাগরিকত্ব নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত যা করতে যাচ্ছেন তাতে শংকিত ইউএসসিআইআরএফ। ভারতের নাগরিকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে দেশটির সরকার।লাখো লাখো মুসলমান তাদের নাগরিকত্ব হারাবে।"

বিবৃতিতে বলা হয়, "এ বছরের জানুয়ারি মাসেই লোকসভায় নাগরিকত্ব বিলটি পাস করা হয়েছিল। তবে বিক্ষোভের মুখে তা বাস্তবায়ন পিছিয়ে নেয়া হয়। ফেলে রাখা হয় রাজ্যসভাতে উত্থাপনের জন্য।এটি আইনে পরিণত করতে হলে দুই কক্ষেই তা পাস করাতে হবে।এ বিলের বিষয়টি বিজেপির নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে উল্লেখ করা ছিলো।"

এ বিবৃতির পরপরই পাল্টা একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারত। ইউএসসিআইআরএফ এই বিবৃতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভেশ কুমার বলেছেন, এটি অনাকাংখিত এবং সঠিক নয়।

সোমবার মধ্যরাতে ভারতের লোকসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পরও নানা মহলে এই বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হচ্ছে।

টানা সাত ঘণ্টা বিতর্ক শেষে রাত ১২টার পর নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১, বিপক্ষে ৮০।

বিল পাসের জন্য দেওয়া ভাষণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা যারা ধর্ম, প্রাণ ও সম্মান রক্ষার তাগিদে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নাগরিকত্ব তাদেরই দেওয়া হবে, যাঁরা এই তিন দেশ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে চলে এসেছেন।

কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল যেমন পার্লামেন্টে এই বিলের বিরোধিতা করেছে, তেমনি বিভিন্ন মুসলিম দলের নেতারাও বিলটিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন।

ভারতের অ্যাক্টিভিস্ট ও সাবেক আমলাদের একাংশ তো এই বিলের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন গড়ে তোলারও ডাক দিচ্ছেন।

হাজারো প্রতিবাদের মুখেও সরকার তাদের অবস্থানে অনড়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন বিলটিকে রাজ্যসভায় আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জিএস/