৫ হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি আত্মসাৎকারীদের সন্ধানে দুদক

৫ হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি আত্মসাৎকারীদের সন্ধানে দুদক

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাঁচ হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি আত্মসাৎকারীদের সন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে রেলওয়ের জমিতে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের ১৩ মালিক হাজিরা দিয়েছেন ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে। এ ছাড়া তিনজনের ঠিকানা ভুল থাকায় তারা দুদকের নোটিশ গ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সৈয়দপুরে রেলওয়ের প্রায় ৮০০ একর ভূসম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াইশ একর জবরদখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। এদিকে রেলের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে ব্রিটিশ সরকার এত বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করলেও অর্ধশত বছরে এসব জমির মূল্য এতটাই বেড়েছে যে, ভূমিদস্যুরা আইনি কোনো বাধাই মানছে না। তারা ক্ষুধার্ত বাঘের মতো প্রতিনিয়ত দখল করছে রেলের ফাঁকা জায়গা, কোয়ার্টার ও বাংলো। তবে মাঝে মধ্যে এসব জমি উদ্ধারে রেলওয়ে বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও আবার তা দখল হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, সৈয়দপুরসহ পাকশী ডিভিশনের ২৬ হাজার একর জমির মধ্যে অপারেশনাল কাজে ৫৫ শতাংশ, ২৫ শতাংশ লিজ, ৮ শতাংশ মামলাভুক্ত ও ১২ শতাংশ জমি বেদখল রয়েছে। আর এই ডিভিশনের রেলওয়ের ৩৫ জেলায় বিস্তৃত এত সম্পদ রক্ষায় পাহারা দিচ্ছেন মাত্র ২ কর্মকর্তা ও ১৩ কর্মচারী। ফলে লোকবলের অভাবে উদ্ধার হওয়া জমি আবার চলে যাচ্ছে ভূমিদস্যুদের দখলে। এ ছাড়া এখনো ডিজিটাল পদ্ধতির ছিটেফোঁটাও লাগেনি এই বিভাগে। ফলে মান্ধাতা আমলের ঘুণে ধরা রেকর্ডপত্র অনেক কাচারিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো কাচারির রেকর্ডপত্র নিজ অফিসের দুষ্টচক্রের হাতে লুণ্ঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্রটি আরো জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী বাণিজ্যিক প্লটে একতলার বেশি ঘর ওঠানোর সুযোগ না থাকলেও সৈয়দপুরে যেদিকে চোখ যায়, শুধু বহুতল ভবন আর ভবন। মার্কেট, গোডাউন, খানকা, গ্যারেজ, মসজিদ, দোকান, শোরুম, বসতবাড়ি, ডেইরি ফার্ম কী নেই রেলওয়ের জমিতে। তবে দেরিতে হলেও রেলওয়ে বিভাগ কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ২০১৭ সালের মামলায় দুদক গত ২১ অক্টোবর প্রথম পর্যায়ে সৈয়দপুর রেলভূমিতে গড়ে ওঠা মার্কেট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ১৬ মালিককে নোটিশ প্রদান করে। এসব নোটিশ সৈয়দপুর থানার মাধ্যমে বিলি করা হয়। নোটিশপ্রাপ্ত ভবন মালিকরা হলেন বিউটি সাইকেল স্টোরের মালিক আলতাফ আহমেদ, আজিম উদ্দিন হোটেলের মালিক নিজাম বিন আজিম, বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন ভোলা, বাগদাদ ক্লোথ স্টোরের মালিক গোলাম জিলানী, কোহিনুর ক্লোথ স্টোরের মালিক মো. শাহিন, ওয়াসের খানের ছেলে ইকবাল খান ভোলা, মৃত সামির আহমেদের ছেলে শাহজাদ মুরাদ, গোয়ালপাড়ার জহির উদ্দিনের ছেলে জাকির উদ্দিন, মৃত নাসির উদ্দিনের ছেলে নান্নু মিয়া, মৃত ফতে আলমের স্ত্রী শাহনাজ বানু, আবদুল আজিজের ছেলে মো. শাহিন, মো. শাহবাজের স্ত্রী রাজিয়া বেগম, মৃত আজগার আলীর ছেলে আনোয়ার আলী ও শওকত আলী। এ ছাড়া ঠিকানা ভুল থাকায় হাজি জাবেদ আলীর ছেলে এনামুল ইসলাম, ঋতু মিয়ার ছেলে ফিরোজ আলী ও বাঁশবাড়ী মহল্লার মৃত ডা. অনিল কুমারের ছেলে অমিত কুমার দুদকের নোটিশ গ্রহণ করেননি। নোটিশগ্রহীতারা গত ২৯ অক্টোবর ঢাকায় দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। এদিকে রেলওয়ের করা মামলায় অনুসন্ধান শুরু হওয়ায় অন্য দখলদারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সৈয়দপুর রেলওয়ের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ঊধ্বর্তন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তহিদুল ইসলাম দুদকের নোটিশ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পর্যায়ক্রমে আরো দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হবে।