আম বয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমা

আম বয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমা

টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে তাবলিগ জামাতের ৫৭ তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা। আগামী রবিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি।

কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে টঙ্গীতে ইজতেমামুখী মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। গত বুধবার বিকাল থেকেই মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুসল্লিদের স্রোত আরও বাড়তে থাকে। আুনষ্ঠানিকভাবে আজ ইজতেমা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার ফজরের পর থেকেই বয়ান ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলছে। মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিতে ট্রেন, নৌকা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে ইজতেমা মাঠে সমবেত হচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রস্তুতিমূলক বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা ফারুক হোসেন। তিনি ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়মকানুনের বর্ণনা করেন।

শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির-আসকার, ইবাদত-বন্দেগীতে ইজতেমা ময়দান মুখরিত। হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ হলো এ বিশ্ব ইজতেমা। ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইজতেমা থেকেই দাওয়াতি কাজে বের হন মুসল্লিরা।

ইজতেমা মাঠের মুরব্বি প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, পাকিস্তানের রায়বন্দের মুরব্বি মাওলানা উবায়দুল্লাহ খুরশিদ আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু করেন। জুমার নামাজের ইমামতি করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। তিনি জুমাপূর্ব বয়ানও করবেন মুসল্লিদের উদ্দেশে। পবিত্র জুম্মার নামাজে লাখ লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকে গাজীপুর, টঙ্গীসহ আশপাশের লোকজন ইজতেমায় বৃহত্তর জুমার নামাজের জামাতে অংশ নিতে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসছেন।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান (ছবি: ফোকাস বাংলা)

ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেননি। দুপুরের পর থেকে ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ইজতেমা ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা ময়দানের পাশের রাস্তা ও ফুটপাতে পলিথিনে সামিয়ানা টানিয়ে তার নিচেই অবস্থান নিয়েছেন। তবে এশার নামাজ পর্যন্ত ইজতেমামুখী মানুষেরে স্রোত অব্যাহত ছিল।’

ইজতেমার প্রথম পর্বের গণমাধ্যমবিষয়ক সমন্বয়কারী মুফতী জহির ইবনে মুসলিম জানান, রবিবার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত চলবে ধারাবাহিক আমল ও হেদায়েতের বয়ান। বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনে বয়ান করবেন বিশ্ব তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিরা। কে কখন বয়ান করবেন, কে জুমার নামাজ পড়াবেন ও কে আখেরি মোনাজাত পরিচালন করবেন, সেসব বিষয়ে ইজতেমার ময়দানে বিশ্ব তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের মাশওয়ারা (বিশেষ পরামর্শ সভা) অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাশওয়ারায় আলমি শুরার সদস্য ছাড়া কাকরাইল ও রায়বন্দের মুরব্বিদের পাশাপাশি শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও বিভিন্ন দেশের মারকাজের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। মাশওয়ারায় সিদ্ধান্ত হয়েছে শুক্রবার ইজতেমা মাঠে বৃহত্তর জুমার নামাজের ইমামতি ও রবিবার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের।

কে কখন বয়ান করবেন

শুক্রবার জুমার পর বয়ান করবেন শেখ ইউনুস আলী তিউনিসি, আসরের নামাজের পর বয়ান করবেন রায়বন্দের শায়খ মাওলানা ইহসানুল হক, বাদ মাগরিব আলমি শুরার সদস্য ও তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা আহমদ লাট। বিদেশি খিত্তায় বয়ান ইংরেজিতে অনুবাদ করবেন ডক্টর সানাউল্লাহ খান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করবেন আলিগড়ের ডক্টর ফারাহিম। বিশেষ বয়ান বেঙ্গালুরের ভাই ফারুক।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) বাদ ফজর মুম্বাই মারকাজের মুরব্বি মাওলানা আবদুর রহমান উপস্থিত সাথীদের উদ্দেশে আম বয়ান করবেন। পরে আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করবেন মাওলানা ইবরাহীম দেওলা, আরবের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বয়ান মাওলানা আকবর শরীফ, জোহরের পর মাওলানা ইসমাইল গোধরা, বাদ আসর শায়খ মাওলানা জোহায়ারুল হাসান, বাদ মাগরিব মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। এদিন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাঠে বিশেষ বয়ান করবেন মাওলানা আহমদ লাট।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান (ছবি: ফোকাস বাংলা)

রবিবার (১২ জানুয়ারি) বাদ ফজর হেদায়েতি বয়ান করবেন মাওলানা জিয়াউল হক, আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ বয়ান মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। সিদ্ধান্ত মতে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বিশ্ব মুসলিমের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।

ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চার শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ২০টি প্রবেশ পথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করবেন। তারা কোনও প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সিগন্যালের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করবেন।

এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫টি ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, ১১টি চেকপোস্ট, হেলিকপ্টার ওঠানামার জন্য দুটি পয়েন্টে হ্যালিপ্যাড ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও আটটি সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে তা ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আলমী শূরাপন্থিদের ইজতেমা শেষ হওয়ার পর ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) একই মাঠে দিল্লির মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।