'বাংলাদেশে জন্ম নেয়াটাই ছিল আমাদের আজন্ম পাপ'

'বাংলাদেশে জন্ম নেয়াটাই ছিল আমাদের আজন্ম পাপ'

করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশে অন্য অনেক দেশের মতোই রয়েছে বাংলাদেশি কর্মী-শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে ৩১২ জনকে চীন থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হলেও এখনো সেখানে রয়ে গেছেন অনেকে। তাদেরই একজন চায়না থ্রি গরজেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষার্থী মুরাদ। সম্প্রতি তিনি ফেসবুকে এক  স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটাই ছিল আমাদের আজন্ম পাপ।’

ওই স্ট্যাটাসে মুরাদ লিখেছেন, ‘অনেক কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট হচ্ছে হুবেইতে থাকা বাকি ১৭১ জন স্টুডেন্টকে ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে। আসুন এটি পরিষ্কার করা যাক। ইসাং হুবেই প্রদেশের একটি শহর। উহানের প্রতিবেশী শহর বলা যায়। উহান যেদিন থেকে লকডাউন, ইসাংও সেদিন থেকে লকডাউন। এখন এখানে থাকা আমরা দুদিক থেকেই সমস্যায় আছি। লকডাউনের জন্য নিজে টিকিট কেটে দেশে যেতে পারছি না, একদম সরাসরি এপিসেন্টার না হওয়ায় সরকার আমাদেরকে গুরুত্বই দিচ্ছে না।’

‘আমাদের শহরে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এম্বাসিতে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের কিছুদিন আশ্বাস দিয়েছেন, লিস্ট নিয়েছেন। এরপরে সুর পাল্টেছেন। তাদের নাকি ফান্ড নেই। আমাদের সমস্যা শুধু ভাইরাস না। ভাইরাসের থেকে বড় সমস্যা খাবার। আগে অনুমতি নিয়ে বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারলেও এক সপ্তাহ আগে থেকে ডর্মেটরি সিলড অফ। কোনোভাবেই বাইরে যাওয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে ভার্সিটি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ক্যান্টিন থেকে খাবার অর্ডার করা যায়, একটা গ্রুপকে খাবার অর্ডার করলে তারা ডেলিভারি দেবে। এ খবরটা শুনেই এম্বাসি বলে দিয়েছে খাবার নিয়ে আমাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। আসলে জিনিসটা লিখিতভাবে যত সহজ শোনাচ্ছে বাস্তবে এতটাও সহজ না। ক্যান্টিন থেকে যেসব খাবার দেয় সেখানে দাম অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় সমস্যা চাইনিজ খাবার, অনেকে মুখেই নিতে পারি না। খাবারের গন্ধ কেউ সহ্য করতে পারে না।’

‘এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন চায়নাতে আমাদের চিকিৎসা ভালো হবে। দেশে না যেতে। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আমরা কেউ এখনো আক্রান্ত হইনি। এখনই চিকিৎসার ব্যাপার কেন আসছে? এটা কোন ধরনের গোঁজামিল! সুস্থ থাকা অবস্থায় দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা না করে অসুস্থ হওয়ার পর ভালো চিকিৎসা দেখানো হচ্ছে!’

‘ভারত, মরোক্কো, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কান বন্ধুদের দেশে ফিরে যেতে দেখলাম। আফ্রিকার কয়েকটি দেশও তাদের স্টুডেন্ট ফিরিয়ে নিয়েছে। আমরা বাংলাদেশিরাই কয়েকজন আফ্রিকানের সাথে এখানে আছি। বারবার এম্বাসি থেকে ফান্ডের কথা শোনানো হয়। সত্যিই এই দেশ বিপদের সময়ে ১৭১ স্কলারদের দেশে ফেরাতে পারছে না ফান্ডের অভাবে! দ্যাটস আ শেইম!’

সবকিছু ভুলেই আমরা তাকিয়ে আছি প্রধানমন্ত্রী আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে। তারাও যদি আমাদের সুস্থ অবস্থায় না ফিরিয়ে অসুস্থ হওয়ার পর চীনের উন্নত চিকিৎসার কথা শোনায়, তাহলে মারা যাওয়ার পর যেন আমাদের এপিটাফে লেখা হয় ‘বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটাই ছিল আমাদের আজন্ম পাপ’।

এমজে/