দেশের বারোটা বাজুক আর তেরোটা বাজুক তাতে তাদের কী আসে যায়: বিএনপি

দেশের বারোটা বাজুক আর তেরোটা বাজুক তাতে তাদের কী আসে যায়: বিএনপি

দেশের সর্বস্তরে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাতের চিত্র তুলে ধরে তিনি অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, দেশের বারোটা বাজুক আর তেরোটা বাজুক তাতে তাদের কী আসে যায়?

শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে রিজভী আহমেদ বলেন, বিদেশে রাজকীয় জীবনে শতাধিক ব্যাংক লুটেরা। পরিস্থিতি এমন যে, ব্যাংক থেকে টাকা মেরে দেয়া সবচেয়ে সহজ। এই উৎসবে মেতেছিলেন বেশ কয়েকজন। হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে তারা এখন লাপাত্তা। যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বিনা বাধায়। করছেন রাজকীয় জীবনযাপন।

অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এত ভয়ঙ্কর খবরের পর যখন নিশিরাতের সরকারের অর্থমন্ত্রী নিজেকে বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, তখন জনগণের বুঝতে বাকি থাকে না যে, এই সরকারের সবটাই শুভঙ্করের ফাঁকি। মহালুটপাট হরিলুটের কোনো প্রতিকার বা প্রতিরোধ হচ্ছে না। কোনো বিচার বা শাস্তিও হচ্ছে না। দলকানা দুদক এসব দেখে না। কারণ এদের গোড়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রসারিত। তারা ক্ষমতায় বসেছেন কেবল লুটেপুটে-চেটেপুটে খেতে। দেশের বারোটা বাজুক বা তেরোটা বাজুক তাতে তাদের কিছু আসে যায় না।

কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই দাবি করে তিনি বলেন, দেশে মানুষের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে একমাত্র নিরাপদে জনগণের ভোট ডাকাতি ছাড়া, আর খুন-গুম ছাড়া দেশে কিংবা বিদেশে কোথাও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা মনে করে ভোট ও বিবেক দুটোই কিনে ফেলেছে। বিএসএফ বাংলাদেশিদের হত্যা করলেও সরকার ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না। প্রতিদিন সহায় সম্বল হারা মানুষ প্রবাস থেকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরছে, কিছুই করতে পারছে না সরকার। আবার অনেকে উন্নত জীবনের আশায় সাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশ যেতে গিয়ে ডুবে মরছে সাগরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টের কথা তুলে ধরে রিজভী আহমেদ বলেন, খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের শীর্ষ তিন জন গ্রাহক যদি কোনো কারণে ঋণখেলাপি হন, তা হলে দেশের ২১ ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। আর মাত্র ৭ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। এর অর্থ দাঁড়ায়, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এবং ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত দেশের জনগণের সম্পদ হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তির কাছে জিম্মি।

তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা মেরে বিভিন্ন সময় বিদেশে পালিয়ে গেছেন এমন শতাধিক লুটেরাকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের টাকা তুলতে না পেরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এসব ঋণকে মন্দ ঋণ (খেলাপি) ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি এদের কারণে একটি অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন। বিদেশে করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান আছে কানাডাতেও। কয়েকশ কোটি টাকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফজাল হোসেন। এমন আরো অনেকে ব্যাংকের টাকা মেরে ব্যাংকক, দুবাই, অস্ট্রেলিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির কথা তুলে ধরে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, বেসিক ব্যাংক থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কানাডায় পালিয়েছেন স্ক্র্যাপ (জাহাজভাঙা) ব্যবসায়ী গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু ওরফে জিবি হোসেন। দুদক তার পাসপোর্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেও তাকে আটকানো যায়নি। গাজী বেলায়েত এখন কানাডার টরন্টোয় থাকেন। অগ্রণী ব্যাংকের ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ও বিডিবিএল থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন এর মালিকরা।