চীনের কারাগারেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস

চীনের কারাগারেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস

চীনের কারাগারগুলোতেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কারাগারে চার শতাধিক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। ভাইরাসটি প্রাদুর্ভাবের এই নতুন ‘হটস্পট’ আবির্ভূত হওয়ার ঘটনা রোগটি নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। কারাগারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শ্যানডং প্রদেশের বিচার বিভাগের প্রধানসহ আটজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, গত বছরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রদেশটির বিভিন্ন কারাগারে ২৭১ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হন। এর আগে আরও ২২০ জন আক্রান্ত হন। এই ২২০ জনের আক্রান্তের তথ্য আগে জানা ছিল না প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের।

স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র ‘হুবেই ডেইলি’ জানিয়েছে, শুধু উহানের নারী কারাগার থেকেই ২৩০ জনের আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। কারাগারের তত্ত্বাবধায়ককে প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ব্যর্থতার দায়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪১ জন কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে শাইয়াং জেলার কারাগারে।

শ্যানডং প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, রেনচেং কারাগারের ২০০ বন্দী ও ৭ জন কারারক্ষীর করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে।

এ ঘটনায় শ্যানডং বিচার বিভাগের প্রধান সিএ ওয়েজুনসহ আরো দুই প্রদেশের কারাগারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সংশোধনাগারের পাঁচ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

শ্যানডংয়ের কারাগার প্রশাসনের পরিচালক উ লেই জানান, নতুন এই ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ভাইরাসটি মোকাবিলায় প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কাজে আসেনি।

ঝেজিয়াং প্রদেশের শিলিফেং কারাগারে ৩৪ জন কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কারাগারের পরিচালক ও এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

হুবেই প্রদেশ আজ শুক্রবার ভোরে জানিয়েছিল, গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ৪১১ জন আক্রান্ত হয়েছে। পরে কারাগারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যুক্ত করে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সংশোধন করে ৬৩১ জন বলে জানানো হয়।

করোনাভাইরাস নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার এ তথ্য এমন সময় পাওয়া গেল যখন চীন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমার দাবি করেছিল। শঙ্কায় চীনের বেশির ভাগ এলাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। স্কুলগুলো বন্ধই রয়েছে। বেইজিং চান্দ্রবর্ষের ছুটি কাটিয়ে শহরে ফেরা বাসিন্দাদের ১৪ দিনের নিজস্ব কোয়ারেন্টাইনে (রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায় পৃথক রাখা) যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বেইজিংয়ের দুটি হাসপাতালে নতুন আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেইজিংয়ের ফুসিন হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগী রয়েছে ৩৬ জন। স্বাস্থ্য কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও সংক্রমণের শিকার হয়েছে। পেকিং ইউনিভার্সিটি পিপলস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন বয়স্ক কিডনি রোগীর করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। এই বৃদ্ধকে এ মাসের শুরুতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত দুজন স্বজন দেখতে গিয়েছিল।

ওই দুই হাসপাতালে সংক্রমিত লোকজনের সংস্পর্শে আসা লোকজনকেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। একটি প্রসূতি ওয়ার্ডের ১২ জন নারী ও ১০ জন শিশুকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হাসপাতাল ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন ক্যাম্পে অন্তরীণ থাকা সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভাইরাসটি ছড়ানো থেকে সতর্ক করা হয়েছে। অধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ১০ লাখের বেশি মানুষকে ওই ক্যাম্পগুলোতে আটকে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।