কলকাতা থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা

কলকাতা থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা

ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালো স্বরজিৎ রায়ের দল৷ ৪৮৭ কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসেছেন তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে৷

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকায় এসে পৌঁছায় স্বরজিতের দল৷ বুধবার সকালে ২১ সদস্যের দলটি খালি পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে গিয়ে বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়৷ এর আগে পলাশী মোড় থেকে তারা ব়্যালি শুরু করেন৷ ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরই সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এসে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানান তারা৷

এই দলটির নেতা স্বরজিৎ রায় ডয়চে ভেলেকে দেয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল৷ দুই দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা একজন মানুষ, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাকেই এবারের ব়্যালি উৎসর্গ করা হয়েছে৷ আমাদের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ন্যাশনাল টুরিজম ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট৷ তিনি বলেন, আমরা আগামীবার আবার আসবো৷

মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন স্বরজিৎ৷ ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে এমন উদ্যোগের কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, দু'টি দেশের যে ভাষার টান, তাকেই সম্বল করে আমরা বারবার এদেশে আসছি৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববোধ আরো প্রসার করার লক্ষেই এই দেশে আসা৷

২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শেষ হয় তাদের এই যাত্রা৷ স্বরজিৎ বলেন, আমাদের একটি শ্লোগান আছে– বাংলা কখনও হয় না ভাগ, বাংলা ভাষায় আমরা এক– এই শ্লোগানকে বুকে ধারণ করেই আমাদের এই যাত্রা৷ জন্মের পর থেকে তিনটি জিনিস আমরা বয়ে বেড়াই– এক, নাগরিকত্ব; দুই, আমাদের ধর্ম, আর তিন, আমাদের জাতিসত্তা৷

কলকাতা থেকে আসা এই দলটিকে সহায়তা করা ন্যাশনাল টুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পারভেজ আহমেদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, বহুদিন ধরেই আমরা পর্যটন কর্পোরেশন কলকাতার পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণ করি৷ সেখানেই তাদের সঙ্গে সখ্য৷ সবাই আমরা বাংলা ভাষাভাষী৷ তাহলে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ কেন থাকবে? এসব চিন্তা থেকেই আমরা তাদের সহযোগিতা দেই৷ পর্যটনের আবাসিক ব্যবস্থা অবকাশে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তারা যে কষ্ট করে এখানে এসেছেন, আমরা সত্যিই তাদের নিয়ে গর্ব অনুভব করি৷

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে রানাঘাট হয়ে গেদে সীমান্ত পেরিয়ে দর্শনা, মেহেরপুরের মুজিবনগর৷ এরপর চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার, রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতে যায় দলটি৷ সেখান থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ হয়ে মোট প্রায় ৪৮৭ কিলোমিটারের যাত্রা শেষে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছায় এই দল৷ বাংলাদেশে থাকা রবীন্দ্রনাথের সব স্মৃতিকেই তারা স্পর্শ করে ঢাকায় আসেন৷ এবারের বিষয় রবীন্দ্রনাথ৷ তাই এই পথ বেছে নেন তারা৷

দলটির সহনেতা সুদীপ্ত পাল ডয়চে ভেলেকে জানান, ভারতের ট্যুর সংস্থা হান্ড্রেড মাইলসের উদ্যোগে তাদের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসার ঘটনা ৬ বছরের পুরনো৷ ২০১২ সাল থেকে তারা নিয়মিত বাংলাদেশে আসছেন এবং শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ঘুরে দেখছেন বাংলাদেশের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো৷ জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি থেকে শুরু হয় তাদের ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী বন্ধন সাইকেল ব়্যালি– ভাষা সূত্র ২০১৮৷ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এই যাত্রার উদ্বোধন করেন বেঙ্গল অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, জোড়াসাঁকো বিধানসভার সদস্য স্মিতা বক্সি, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শ্রী ধ্রুব বসু রায়, শুভেন্দু মাইতি, তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অধ্যাপিকা ড. সন্ধ্যা ভাদুড়ি ও বিশিষ্ট কবি ঋজুরেখ চক্রবর্তী৷

দলনেতা স্বরজিৎ জানান, প্রথমে একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকজন বন্ধুর উৎসাহে নিছকই এডভেঞ্চারের জন্য অভিযানটি শুরু করা হয়েছিল৷ কিন্তু ক্রমে ক্রমে তা বিস্তৃত হয়ে পড়েছে৷ প্রথম বছর অভিযানে সঙ্গী ছিল মাত্র ৭ জন৷ ধীরে ধীরে তা বেড়ে এই বছর হয়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জন৷ এই উৎসাহে শামিল হয়েছেন ৬৭ বছরের আরোহীও৷ গতবার ছিল ১২ বছরের দীপ৷ খুব সম্ভবত এই রকম ক্রস-কান্ট্রি সাইকেল ব়্যালিতে সবচেয়ে কম বয়সি ব্যক্তি৷ এই বছর অবশ্য আরো খুদে এক সদস্য শামিল হয়েছে৷ আয়ুস৷ বয়স মাত্র ৭ বছর৷ বাবার সঙ্গে সে-ও এবার সাইকেল আরোহী৷ -ডয়চে ভেলে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২৩৪০ঘ.)