যুবলীগ নেতার লাথিতে আশঙ্কায় অন্তঃসত্ত্বা নারী

যুবলীগ নেতার লাথিতে আশঙ্কায় অন্তঃসত্ত্বা নারী

পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, ভুক্তভোগীর স্বামী ওই নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে গভীর রাত পর্যন্ত তাকে বসিয়ে রেখেও শেষ পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। অন্যদিকে অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন তার স্বামী।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর পল্লবীতে। ভুক্তভোগীর নাম মায়া বেগম। আর অভিযুক্তের নাম মো. রওশন আলী। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ৯১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি। গত সোমবার সকালে পল্লবীর সেকশন ১২, ই-ব্লকের ৬ নম্বর সড়কের ৮৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে এ ঘটনা ঘটে, যা লিটনের বাসা হিসেবে পরিচিত।

সোমবার পেটে লাথি মারার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মায়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান তার স্বামী মো. মিলন মিয়া। সন্ধ্যায় তারা বাসায় ফেরেন। এর পর মিলন মিয়া রাত আটটার দিকে পল্লবী থানায় মামলা করতে যান। তাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয় দীর্ঘ সময়। মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও পুলিশ তার মামলা না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাসায় ফিরে যান। গত মঙ্গলবার এসব কথা জানান মিলন। স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, উদ্বেগের সঙ্গে বলেন তিনি।

মামলা গ্রহণ না করার বিষয়ে গতকাল বুধবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, মারামারির ঘটনার পর জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসা শেষে তাদের থানায় আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা আসেননি। অন্তঃসত্ত্বার স্বামী মামলা করতে থানায় এসেও ফেরত গেছেন- এমন অভিযোগ সত্যি নয়, দাবি করেন ওসি।

মিলনকে মারধর ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে মো. রওশন আলী বলেন, ‘একটু মারামারি হইছিল। ওইটা সমাধান হয়ে গেছে।’

পেশায় রাজমিস্ত্রি মিলন জানান, সপরিবারে তিনি শুকুর আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সোমবার সকালে বাসার অদূরেই লিটনের বাসায় পানির ট্যাংকের ঢালাই কাজে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লিটনের পরিচিত যুবলীগ নেতা রওশন আলী ঢালাই কাজ ভালো হচ্ছে না জানিয়ে তিরস্কার করতে থাকেন। একপর্যায়ে মিলনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে শুরু করেন। এ সময় মা-বোন তুলে গালাগাল দিতে নিষেধ করেন মিলন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান রওশন। তিনি মিলনকে মাটিতে ফেলে মারধর করতে থাকেন।

প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান মায়া বেগম তার স্বামীকে বাঁচাতে। তখন তাকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন রওশন। একপর্যায়ে মায়ার গায়েও হাত তোলেন। এ সময় মায়া ডাকাডাকি শুরু করলে রওশন আলী তার তলপেটে সজোরে লাথি মারেন। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন মায়া; অজ্ঞান হয়ে যান। প্রতিবেশীরা তখন জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে আহত দম্পতিকে। এর পর মায়াকে নিয়ে তারা যান ঢামেক হাসপাতালে।

মিলন জানান, প্রথমে পুলিশ মামলা নিতে চাইলেও কোনো একজন ব্যক্তির একটি ফোন আসার পর শুরু হয় তাদের গড়িমসি। অপেক্ষারত সময়ে এক পুলিশ সদস্য মিলনকে বলেন, তিনিই ঘটনার বিচার করে দেবেন। এ নিয়ে যেন বেশি বাড়াবাড়ি করা না হয়। কিন্তু তার প্রস্তাবে সাড়া দেননি মিলন। তবু তার মামলা নেওয়া হয়নি।

অন্তসত্ত্বা স্ত্রী সম্পর্কে মিলন জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, আঘাতের কারণে মায়ার পেটের বাচ্চারও জখম হয়েছে। তবে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে তার ও গর্ভের শিশুর। একথা জানিয়ে চিকিৎসকরা ওষুধ লিখে দেন এবং পরামর্শ দেন বাসায় চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার। সন্ধ্যায় মায়াকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। তিনি জানান, মায়ার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন তিনি।

এমজে/