করোনায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্থবিরতা

করোনায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্থবিরতা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে রাজধানীর এডিস মশার উৎস স্থান চিহ্নিত করা এবং ধ্বংসের কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। চলতি এপ্রিল এবং আগামী মে মাসে এটি সঠিকভাবে করতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) মশকনিধন কর্মীদের দিয়ে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর কারণে মশক নিধন কার্যক্রমে স্থবিরতা শুরু হয়। যেটা এখনও চলমান।

এরই মধ্যে রাজধানীতে মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে। ৩১ মার্চ খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিএনসিসি মেয়রকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘মশা সঙ্গীতচর্চা শুরু করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস মোকাবেলা এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সমানতালে পরিচালনা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

১ ও ২ এপ্রিল তিনি মশক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এ নির্দেশনা দেন। এখনো মাঠপর্যায়ে তার প্রতিফলন শুরু হয়নি। আর মশক নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি প্রস্তুতও হতে পারেনি দুই সিটি কর্পোরেশন।

কেননা, এখন পর্যন্ত ডিএসসিসি ৭৫টি ওয়ার্ডে মাত্র ৪২৪ জন মশকনিধন কর্মী নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নতুন ১০ জন করে ৭৫০ জন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনও নিয়োগ চূড়ান্ত করা যায়নি। কবে নাগাদ চূড়ান্ত হবে, তাও অনিশ্চিত।

আর করোনাভাইরাসের আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে ডিএনসিসির মশক শ্রমিকদের। এতদিন তারা ভাইরাস প্রতিরোধে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন। এখনও পুরোপুরি মশক নিয়ন্ত্রণ কাজে যুক্ত হননি। মশার প্রজননে কঠিন বর্জ্য বড় কারণ হলেও নিখুঁতভাবে আবর্জনা পরিষ্কার কাজেও পিছিয়ে রয়েছে দুই সিটি।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার প্রজনন মৌসুম আসন্ন। এখন থেকেই মশার উৎস স্থান চিহ্নিত করে ধ্বংসের উদ্যোগ না নিলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে এডিস মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ জোরদার না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, নবগঠিত এলাকার বাইরে রাজধানীর ১৩৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে প্রায় ৬ কিলোমিটার জলাশয় রয়েছে। নবগঠিত এলাকায়ও অন্তত ৪ কিলোমিটার জলশায় রয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এসব জলাশয়ের মালিক।

সঠিকভাবে এসব জলাশয়ের আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। এ কারণে এসব জলাশয় মশার বড় প্রজনন স্থানে পরিণত হয়েছে। এর বাইরে রাজধানীতে দুই সিটি কর্পোরেশনের অন্তত ৩০০ কিলোমিটার কার্পেটিং ড্রেন রয়েছে, সেসব ড্রেনও পরিষ্কার করা হয় না বলে মশা প্রজননের বড় উৎস স্থানে পরিণত হয়েছে।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মশক নিধন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর ৫৪টি ওয়ার্ডে ২৭০ জন স্থায়ী, ৫৪ জন মাস্টাররোলভিত্তিক এবং ৫৪০ জন আউট সোর্সিং মশক কর্মী রয়েছেন। ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি রয়েছে পর্যাপ্ত।

অন্যদিকে ডিএসসিসি সূত্র জানায়, মশক নিয়ন্ত্রণে ৪২৪ জন মশক কর্মী রয়েছে। এর বাইরে ৭৫০ জন মশক কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কর্মীরা মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি জীবাণুনাশক পানিও ছিটাচ্ছে।

এতে করে তাদের পরিশ্রম বেশি হচ্ছে। দুটো কাজ একত্রে করতে গিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, সেটা বলা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর পরও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের বাসা থেকে কর্মস্থলে আসতেও সমস্যা হচ্ছে।

আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তাদের নানাভাবে হয়রানি করছে। সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রেখেছি।’

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর মশক কর্মীদের মশার ওষুধ ছিটানোর সঙ্গে জীবাণুনাশক স্প্রে করার কাজ করানো হচ্ছিল।

গত কয়েক দিন থেকে তাদের দিয়ে শুধু মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। আর সংস্থার অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের দিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এবার আমরা শুরু থেকে সক্রিয় রয়েছি।’

এমজে/