কোথাও খোলা, কোথাও বন্ধ, কাজে হাজার হাজার শ্রমিক

কোথাও খোলা, কোথাও বন্ধ, কাজে হাজার হাজার শ্রমিক

কারখানা খোলা। কারখানা বন্ধ। দুই দফায় দু’রকম সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত বিজিএমইএ এর তরফ থেকে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার আহবান জানানো হয়। এই আহবানে কেউ সাড়া দিয়েছেন, কেউ দেননি। কারখানা খোলা রেখেছেন অনেকেই। মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়েই সেখানে কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক। ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় অবাধে কাজ চলছে।

কোনো কোনো কারখানা আংশিক খোলা রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা জানতেন, ৫ই এপ্রিল থেকে কাজ করতে হবে। একদিকে লকডাউন। যানবাহন চলাচল বন্ধ। অন্যদিকে চাকরি হারানোর ভয়। তাই চাকরি রক্ষা করতেই ঢাকায় এসেছেন হাজার হাজার শ্রমিক। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল থেকে গতকাল পায়ে হেঁটে এসেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)’র আহবান উপেক্ষা করেই অনেক কারখানা খোলা রেখেছেন মালিকরা। জরুরি কাজের কথা বলে আশুলিয়ার পলাশবাড়ির স্কাইলেন গার্মেন্টসে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ওই গার্মেন্টেসে সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছে। একইভাবে ওই এলাকার জামগড়ার এফএনএফ গার্মেন্ট, ইফিজেডের শান্তা গার্মেন্টসে কাজ করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। গোল্ডটেক্স গার্মেন্টে কাজ করছেন প্রায় ১০ গাজার শ্রমিক। এছাড়াও গ্লোবাল, এসকেআরএম ফ্যাশন লিমিটেডে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

আশুলিয়ার এলায়েন্স গার্মেন্টস খোলা ছিলো ১১টা পর্যন্ত। পরে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে দাবি তোলেন ইউনিয়নের নেতারা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে গার্মেন্ট বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

সাভারের আল মুসলিম, আল লিমা কারখানায় দুই সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।আশুলিয়ার জুরাবোর জেএল সুয়েটার, আইরিশ, আনজে রেফারেন্স, ডিাজাইনার ফ্যাশন, স্প্রিং সুয়েটার, সরকার মার্কেটের বিশাল সুয়েটার, বাইপাইলের এসকেআরএমএস, এক্টর বিডি লিমিটেডসহ বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তবে সাভার, গাজীপুর, উত্তরা, মিরপুরের বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ রয়েছে।

সকালে কারখানার গেইট থেকে ফিরেছেন অনেকে। মাইকিং করে জানানো হয়েছে কারখানা বন্ধ। স্ট্যান্ডার্টগ্রুপের মিরপুরের কালশির আধুনিক পোশাক শিল্প, তেজগাঁও’র এসজিএল, গাজীপুরের গাজীপুর ফ্যাশনসহ বেশ কয়েক কারখানায় ঘটেছে এমন ঘটনা। বেতন কাটা, চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে গতকাল ঢাকায় আসতে বাধ্য করা হয়েছিলো শ্রমিকদের।

পোশাক শ্রমিক মনিরা জানান, সকালে কারখানায় যাওয়ার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরমধ্যেই ফোনে জানতে পারেন কারখানায় নোটিশ ঝুলানো হয়েছে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ। অনেকেই কারখানা পর্যন্ত যান। সেখানে মাইকিং করে বন্ধের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়। কারখানা বন্ধের কারণেও বিপাকে পড়েন শ্রমিকরা। পায়ে হেঁটে পরিশ্রম করে ঢাকায় এসেছেন। এখন আবার ছয় দিন বাসায় থাকতে হবে। জমানো টাকা খরচ করে বা ধার দেন করেই চলতে হবে তাদের।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু জানান, প্রায় ১০ হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট কারখানা খোলা আছে। এর বেশিরভাগ কারখানা গাজীপুর ও আশুলিয়া এলাকায়। শ্রমিক নেতা কে এম মিন্টু বলেন, যেখানে করোনা ভাইরাস প্রতিহত করতে সব লকডাউন করা হয়েছে। জনসমাগম এড়িয়ে যেতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। এইজন্য দন্ডও দেয়া হচ্ছে। সেখানে কারখানা খোলে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন কারখানার মালিকরা। কারখানায় শ্রমিকরা পাশাপাশি বসে কাজ করে। সেখানে হাজার হাজার শ্রমিকের সমাগম হয়। এই অবস্থায় ভাইরাসটি শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এই দায় কে নেবে। কারখানা খোলা রাখার জন্য মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও শ্রমিকদের সুরক্ষার দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, সরকারের সাধারণ ছুটির সময়ে কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেছিলেন, ‘পিপিই ও মাস্ক তৈরির জন্য কেউ চাইলে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন।’ তার এই বক্তব্যের পর শ্রমিকরা ঢাকামুখি হলে সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরমধ্যেই শনিবার বিকালে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান তিনি।