‘এই শিক্ষামন্ত্রী দিয়ে কাজ হবে না’

‘এই শিক্ষামন্ত্রী দিয়ে কাজ হবে না’

ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সারা দেশে ৫২টি মামলা হয়েছে এবং ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ কিন্তু শিক্ষাবিদ এবং অভিভাবকদের অনেকেই মনে করেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে যারা জড়িত, তারা গ্রেপ্তার হয়নি৷

ঢাকার এফডিসি মিলনায়তনে শুক্রবার নবম জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ‘বিতর্ক বিকাশ’-এর গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ওই মামলা এবং আটকের খবর দিয়ে বলেন, “আমি প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস রোধে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতা চাইছি, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন৷ এইসব কাজে (পরীক্ষা) যারা বাধার সৃষ্টি করে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করুন৷”

তিনি চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ৫২টি মামলা করে ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে এখনো সমস্যার মূলে যেতে পারেনি, তা স্বীকার করেন৷

প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিভিন্ন প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, “প্রতিদিনই নতুন কিছু ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি, তারপরও কোনো-না- কোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন বেরিয়ে যাচ্ছে৷”

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বেশিরভাগ বিষয়ের প্রশ্নই পরীক্ষা শুরুর আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে স্বীকার না করলেও পরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পায়৷ একটি পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে নেয়ার কথাও জানিয়েছে তারা৷

আর প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে তারা এবার পরীক্ষার আধা ঘন্টা আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির বাধ্যতামূলক, পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ, পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং ব্যবহার করলে গ্রেপ্তার, প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা, প্রশ্ন ফাঁসে ব্যবহৃত ৩০০ মোবাইল ফোন নম্বর ‘ব্লকড’, ইন্টারনেটের গতি কমানোসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কোনে কাজ হয়নি৷

গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক যৌথ সভায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা স্বীকার করে ছয়টি ফাঁকফোকর চিহ্নিত করে৷ তারমধ্যে অন্যতম হলো, বিজিপ্রেসে প্রশ্ন কম্পোজ, এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ তারা প্রশ্নপত্র কপি করতে না পারলেও স্মৃতিতে ধারণ করা সম্ভব৷ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ রয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে৷

অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অথচ সেখানে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব৷ এছাড়া ভেন্যুগুলো থেকে মূল কেন্দ্রগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি৷ ফলে ৩০ মিনিটের আগে কেন্দ্রসচিব প্রশ্ন খুলতে বাধ্য হচ্ছেন৷ সেখান থেকেও প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে৷ আর এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো আছেই৷

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী যে গ্রেপ্তারের হিসাব দিয়েছেন, তারা কারা? তারা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বাজারজাতকারী অথবা ব্যবহারকারী৷ তারা কেউ প্রশ্ন ফাঁসকারী বলে আমার মনে হয় না৷ এরা কেউ ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়েছে অথবা প্রশ্ন ফেসবুকে দেখেছে৷ কিন্তু ফাঁস করেছে কারা? তাদের তো ধরা যাচ্ছে না৷ ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে কী হবে? তারা তো প্রশ্ন ফাঁস করে না৷ যখন হাজার হাজার মানুষের হাতে প্রশ্ন, তখন এই অনৈতিক অবস্থা তো স্বাভাকিব অবস্থায় পরিণত হয়েছে৷”

আরেক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এখন তদন্তে জানা যাচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত৷ তারপরও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না৷ শুধু বদলি করা হচ্ছে৷ শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে এটা কঠিন৷”

“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে৷ এতে আত্মতৃপ্তির কিছু নাই৷ আগে প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস হলে মানুষ বিস্মিত হতো৷ এখন এটা স্বাভাবিক ঘটনা৷ এই শিক্ষামন্ত্রী দিয়ে হবে না৷ তাকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে দিতে হবে৷”

আর জাতীয় অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু ডয়চে ভেলেকে বলেন, “যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাউকেই চিহ্নিত করা হচ্ছে না৷ এরসঙ্গে জড়িত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা৷ জড়িত শিক্ষা প্রশাসনের লোকজন৷ শিক্ষামন্ত্রী যাদের গ্রেপ্তারের কথা বলছেন, তাদের গ্রেপ্তার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যাবে না৷”

তাদের কথা, পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনসহ আরো যত ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন, সরকারকে আন্তরিক হতে হবে আগে৷ কাউকে বাঁচিয়ে যদি প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন, তাতে ভালো ফল আসবে না৷ -ডয়চে ভেলে

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২১১৮ঘ.)