সিলেটে চিকিৎসা পেলেন না করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক, আনা হলো ঢাকায়

সিলেটে চিকিৎসা পেলেন না করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক, আনা হলো ঢাকায়

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পরও কেন তাকে সিলেটে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হলো না এ নিয়ে সিলেটে চলছে তুমুল সমালোচনা। সিলেটে করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, অপ্রতুল সরঞ্জাম ও লোকবলের অভাবের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান। তিনি জানান, সন্ধ্যার দিকে তাকে সড়কপথে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। সেই হাসপাতালে রেখেই আইসিইউ সুবিধা না পেয়ে ঢাকায় নিতে হয়েছে এই চিকিৎসককে। ফলে সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমানের কাছে। জবাবে তার দাবি, সবকিছু যথাযথ আছে। চিকিৎসকের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুটি ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড কয়েকদিন আগে প্রস্তুত করা হয়। তবে হাসপাতালের মধ্যে সন্দেহজনক রোগীদেরকে যে কক্ষে রাখা হয় (আইসোলেশন ইউনিট) তা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এখানে ভেন্টিলেন্টর থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন, সেন্ট্রাল এয়ারকুলারসহ কিছু সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। আইসিইউ'র শর্ত পূরণের জন্যে এসব সুবিধা অত্যন্ত দরকার। এছাড়া আইসিইউ পরিচালনার জন্যে শামসুদ্দিন হাসপাতালে সার্বক্ষণিক কোনও লোকবল নেই। শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় আক্রান্ত চিকিৎসককে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার প্রস্তাব দেন কয়েকজন চিকিৎসক। কিন্তু অন্য রোগীরা সংক্রমিত হতে পারেন ভেবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এদিকে, ওসমানী হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত ওই চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার পরিবার উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানায়। এজন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর দাবি করা হলে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক প্রথমে তাকে নিজেদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে তারাও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য মত দেন। কিন্তু, তখন তাকে ঢাকায় পাঠানোর মতো অ্যাম্বুলেন্স সাপোর্ট দিতে অপারগতা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ অবস্থায় সিলেটের বেসরকারি ওয়েসিস হসপিটাল তার পাশে দাঁড়ায়। এই হাসপাতালের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

এই বিষয়ে ওই চিকিৎসক আরও জানান, সিলেটে এখনও করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য আলাদা যথেষ্ট চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা (ভেন্টিলেটর সাপোর্টসহ করোনা কেয়ার ইউনিট ও আইসোলেশন সেন্টার) নেই।

এদিকে সমালোচনার মুখে বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতেই শামসুদ্দিন হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে করে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসময় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুসুর রহমান বলেন, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের সেবার জন্য দুটি আইসিইউ ইউনিট কার্যকর আছে। দুদিনের মধ্যে আরও ৯টি ইউনিট পুরোপুরিভাবে চালু হবে। ৯টি ভেন্টিলেশন মেশিন বৃহস্পতিবার সিলেটে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এ হাসপাতালে ১১টি ভেন্টিলেশন মেশিন চালু হবে। সিলেটে করোনা আক্রান্তদের সেবায় প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে করোনামুক্ত রাখতে সেখানে আইসিইউ বিভাগে কাউকে ভর্তি করা হচ্ছে না। ওই চিকিৎসককে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ও আইসিইউ নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে দাবি করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত শহীদ শামুসদ্দিন আহমদ হাসপাতালে দুটি আইসিইউ অত্যাধুনিক ও সচল। প্রয়োজনমতো রোগীদের সেবা দিতে এ দুটি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে বলা হচ্ছে সেগুলো নাকি সচল নয়। আক্রান্ত চিকিৎসকের পরিবার কেন আস্থা রাখতে পারেননি সেটা তাদের ব্যাপার জানিয়ে ডা. আনিসুর রহমান বলেন, মূলত পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। কেউ যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র যেতে চাইলে তাকে আটকে দেওয়া কিংবা বাধা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

সিলেট করোনা আইসোলেশন ইউনিটের সভাপতি অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, হাসপাতালে লোকবল বা সরঞ্জামাদির কোনও সমস্যা নেই। সবকিছু পর্যাপ্ত রয়েছে। শামসুদ্দিন হাসপাতালের দুটি আইসিইউ বেড প্রস্তুত আছে। আরও বেড বাড়ানোর প্রস্তুতিও রয়েছে আমাদের। এছাড়াও সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউ বেডগুলো কাজে লাগানো যায় কিনা সে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।

এমজে/