দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি ফেরত এসেছেন

করোনায় প্রবাসীদের নিয়ে তিন সংকটে বাংলাদেশ

করোনায় প্রবাসীদের নিয়ে তিন সংকটে বাংলাদেশ

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৯ হাজার প্রবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে৷ করোনার ঠিক আগে এবং করোনার মধ্যে আরো দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি ফেরত এসেছেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আরো প্রায় চার-পাঁচ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ফেরত আসতে হতে পারে৷ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন এনজিওর সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে৷

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে তাদের ধাপে ধাপে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হচেছ৷

কুয়েত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে ৷ যারা এর আওতায় নিবন্ধন করেছে তাদের সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশিকে ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে৷ তাদের ফেরত পাঠানো হবে৷ সৌদি আরব থেকে চার হাজার ২৬২ জন, ওমান থেকে এক হাজার, মালদ্বীপ থেকে চারশ' প্রবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে৷ এছাড়া জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও ফেরত পাঠানো হবে৷

করোনার মাঝেও শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে দেশে ফিরেছেন এক হাজার ৫০৩ জন বাংলাদেশি৷ আর চলতি মাসের ১১ মে পর্যন্ত ফিরেছেন ৬৭৩ বাংলাদেশি৷

আর এপর্যন্ত বিশ্বের ১৭ টি দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি৷ মারা গেছেন ৫৮৬ জন৷ তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫০ জন, যুক্তরাজ্যে ২০০ , সৌদি আরবে ৭৬ , কুয়েতে ১৭, ইটালিতে আট, কানাডায় সাত, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছয়, ফ্রান্স ও স্পেনে পাঁচ জন করে, কাতারে চার , সুইডেনে দুই, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় এক জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন৷

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরীফুল হাসান জানান জানান,‘‘আমাদের যে এক কোটি প্রবাসী আছেন তাদের ৭৫ ভাগই আছেন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে৷ আর তারা মূলত শ্রমজীবী মানুষ৷ সেখানে শতকরা দুই ভাগের মত প্রবাসীর স্থায়ী কোনো কাজ আছে৷ বাকিদের কোনো স্থায়ী কাজ নেই৷ শুধুমাত্র সৌদি আরবেই তিন লাখ প্রবাসী আছেন ফ্রি ভিসায়৷ আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তাতে এখন তাদের অধিকাংই কাজ হারিয়েছেন৷ তারা খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে আছেন৷’’

তিনি এই করেনার কারণে বাংলাদের সামনে তিনটি সংকট দেখতে পাচ্ছেন৷ সেগুলো হলো বিপূল সংখক প্রবাসীর চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসা, তাদের কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী আয় কমে অর্থনীতির ওপর চাপ৷

তিনি জানান, ‘‘প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় গড়ে ৫০ হাজার লোক বিদেশে কাজ নিয়ে যেতেন৷ গত তিন মাস ধরে তা বন্ধ আছে৷ করোনা যদি আরো তিন মাস থাকে তাহলে তিন লাখ লোকের কর্মস্থান বন্ধ হয়ে যাবে৷ করোনা শুরুর আগেই দুই লাখ প্রবাসী ছুটিতে এসেছেন৷ তারা যেতে পারেননি৷ আর কখনো যেতে পারবেন কিনা তাও অনিশ্চিত৷ করোনার মধ্যেও প্রবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে৷ আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আরো তিন-চার লাখ প্রবাসীকে ফেরত পাঠানো হতে পারে৷ শেষ পর্যন্ত মোট সংখ্যাটি সাত লাখ হতে পারে৷’’

তিনি জানান, ‘‘প্রবাসী আয় কমতে শুরু করেছে৷ প্রবাসীরা গড়ে ১৫০-১৬০ কোটি ডলার দেশে পাঠান ৷ কিন্তু মার্চে তা ১২৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে৷ এপ্রিলে ১০৮ কোটি ডলার যা গত তিন বছরে সর্বনিম্ন৷’’

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামসুল আলম জানান, নানা ধরনের সংকট তো তৈরি হচ্ছে৷ প্রতিদিন কমপক্ষে তিন হাজার বাংলাদেশি বিদেশে যেতেন কাজ করতে৷ তারা যেতে পারছেন না৷ আবার যাদের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে তারাও আসতে পারছেন না৷ যারা ছুটিতে এসেছেন করোনার আগে তারাও যেতে পারেননি৷

সেই কর্মকর্তা জানান, ‘‘অবশ্য কত প্রবাসী এখন বিপদে আছেন এবং কতজন চাকরি বা কাজ হারিয়েছেন তা বলা কঠিন৷ কারণ সমস্যাটা পুরো দুনিয়ার৷ যারা সৌদি আরবসহ বিভন্ন দেশে ছোট খাট ব্যবসা, দোকানপাট চালাতেন বা অস্থায়ী কাজ করতেন তাদের এখন আর কোনো কাজ নেই৷৷ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসী যারা অসহায় অবস্থায় আছেন তাদের সহায়তা কর হচ্ছে যতদূর সম্ভব৷ আর এরইমধ্যে মোট ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যারা চাকরি হারিয়েছেন, যাদের কাজ নেই তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য৷ আর আমরা ওইসব দেশকেও অনুরোধ জানিয়েছি যে তারা যেন আমাদের নাগরিকদের দেখেন৷’’

পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং যারা ফিরে আসবেন তারা যাতে দেশে কিছু করে খেতে পারেন এজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তারা শতকরা চার ভাগ সুদে এই ঋণ পাবেন৷

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেসব দেশে আমাদের প্রবাসীরা আছেন তাদের সহায়তার জন্য ওইসব দেশকে আমরা অনুরোধ করেছি৷ তাদের সহায়তায় তারা কোনো উদ্যোগ নিলে আমরা পাশে থাকব৷’’