হতদরিদ্রদের জন্য নগদ বরাদ্দ: ৫৩ নামের পাশে চেয়ারম্যানের ড্রাইভারের ফোন নম্বর!

হতদরিদ্রদের জন্য নগদ বরাদ্দ: ৫৩ নামের পাশে চেয়ারম্যানের ড্রাইভারের ফোন নম্বর!

লালমনিরহাটে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন নিম্নমধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্রদের আর্থিক সহায়তার জন্য করা তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় হতদরিদ্র ৫৩ জনের নামের পাশে চেয়ারম্যানের গাড়িচালকের মোবাইল নম্বর লেখা হয়েছে। আবার ইউপি সদস্যের ছেলে ও ছেলের বৌয়ের নামসহ মোবাইল নম্বরও যুক্ত করা হয়েছে এই তালিকায়।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিনের নিজস্ব গাড়িচালক ছমির উদ্দিনের মোবাইল নম্বর ৫৩ জন দুঃস্থের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ওই তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৬ জন সদস্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, যেহেতু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই অর্থ প্রদান করা হবে তাই এই সুযোগে কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলালের নির্দেশে তার ড্রাইভার ছমির উদ্দিন নিজের মোবাইল নম্বরটি জুড়ে দিয়েছেন ৫৩ জন সুবিধাভোগীর নামের পাশে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা দিতে উপজেলা নির্বাহী অফিস ও প্রকল্প অফিস কর্মহীন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্রদের পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেয়। ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্ত করে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যানরা ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে জমা দেন।

আদিতমারীর কমলাবাড়ী ইউনিয়নের সুবিধাভোগী আব্দুস সামাদ বলেন, আমার নামের পাশে ছমির উদ্দিনের মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করেছে। মোবাইলে টাকা আসলে সে তুলে নিত আমাদের আর টাকা দিত না।

কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ইউপি সদস্যদের দেয়া নামের তালিকা জমা দেয়া হয়েছে। ৫৩ জনের নামের পাশে ছমির উদ্দিনের মোবাইল নম্বর কেন দেয়া হয়েছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব সংশোধন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ও ফকিরপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্যরা এই তালিকায় তাদের স্বজনদের নাম ব্যবহার করেছেন। বড়খাতা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আহাদ আলী তার ছেলে আসাদুজ্জামান ও ছেলের বউ স্বপ্নাও নামও যুক্ত করেছেন। ইউপি সদস্য আ. সাত্তার প্রায় ১০ জন হতদরিদ্রদের নামের পাশে তার নিজস্ব মোবাইল নম্বর লিখেছেন।

বড়খাতা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ শফিকুল ইসলামের নামও এ তালিকায় রয়েছে। বড়খাতার হাফেজ বজলুর রহমান, দাখিল মাদরাসার এমএলএসএস জাহাঙ্গীর হোসেনের নামও তালিকায় রয়েছে। এছাড়া জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য ও ঠিকাদারের ছেলে মোসাদ্দেক হোসেনের নামও এ তালিকায় স্থান পেয়েছে।

এসব বিষয়ে বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসের ট্যাগ অফিসার সরেজমিনে এসে তালিকা করেছেন। তার সঙ্গে কথা বললে তথ্য পাবেন।

ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরল ইসলামের কাছে হতদরিদ্রদের তালিকা চাইলে তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে তালিকা করে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়ে দেবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, প্রাথমিকভাবে তালিকায় কিছু ত্রুটি ছিল। ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে সংশোধন করা হয়েছে।