সাঈদ খোকনের ক্যাশিয়ার ‘সরদার’ পরিবারের কানাডায় বাদশাহি জীবন

সাঈদ খোকনের  ক্যাশিয়ার ‘সরদার’ পরিবারের কানাডায় বাদশাহি জীবন

দুর্নীতির দায়ে চাকুরি হারিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এর প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার। যিনি সাবেক ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকেনের দক্ষিণ হস্ত এবং ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দায়িত্ব নেয়ার প্রথম কর্মদিবসে তাকে অপসারন করেন নতুন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গত পাঁচ বছর ধরে দাপটে থাকা এ কর্মকর্তার পরিবার কানাডার টরেন্টোতে বাদশাহি জীবনযাপন করছেন। এ কর্মকর্তারও রয়েছে কানাডিয়ান পাসপোর্ট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টরেন্টোর বাঙ্গালিপাড়া ড্যানফোর্থ থেকে দূরে থাকেন ইউসুফ আলী সরদারের পরিবার। সেখানে রাজকীয় বাড়িতে তার পরিবার বসবাস করেন। টরন্টো প্রবাসী এক বাংলাদেশি বলেন, টরেন্টোতে সরদারকে সবাই ব্যবসায়ি হিসেবে চেনে। তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে চলাফেরা করেন।

বাংলাদেশের সব অবৈধ টাকা কানাডা পাচার করে এনেছেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ইউসুফ আলী সরদারের বিরুদ্ধে কমিশন বানিজ্য, দূনীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি দোকান বরাদ্দের নামে লুটপাট, আত্মীয়-স্বজনের নামে দোকান বরাদ্দ এবং একই ব্যক্তির নামে একাধিক দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়া ডিএসসি’র সব কেনাকাটায় সাবেক মেয়র আগ বাড়িয়ে তাকে আহবায়ক করতেন। এতে বাধা দিলে মেয়রের গালমন্দ শুনতে হতো। কি কারনে সাবেক মেয়র যেন ইউসুফ আলী সরদারের প্রতি দূর্বল ছিলেন।

প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার পদে কাউকে যোগদান করতে দেননি সাবেক মেয়র: সাঈদ খোকন মেয়রের চেয়ারে বসার পর লোভনীয় প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পদে বসান উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারকে। টানা চার বছরের বেশি সময় ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। যদিও অতীতে সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেতেন প্রশাসন ক্যাডারের উপ-সচিব পযায়ের কোন কর্মকর্তাকে পদায়ন করার নিয়ম রয়েছে। সাঈদ খোকনের সময়ে তিন দফা এ পদে পোস্টিং দেয়া হলেও তিনি যোগদান করতে দেননি। সব দোষ পড়তো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের উপর। এনিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নানা কথা শুনতে হয়েছে।

ডিএসসিসি’র কেনাকাটা যেখানে সরদার সেখানে: সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ডেঙ্গু নিধন, করোনা ভাইরাস বা ঈদের সময় যে কোন দায়িত্ব রহস্যজনকভাবে দেয়া হতো সাবেক উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদারকে। যদিও সাবেক মেয়র খোকনের বদান্যতায় ইউসুফ আলী সরদার চলতি দায়িত্বে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার করোনা ভাইরাসে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে হতদরিদ্রদের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ জরুরি খাদ্য বিতরণে গঠিত কমিটি’র আহবায়ক করা হয় ইউসুফ আলী সরদারকে। তিনি বিসিএস কর্মকর্তা না হলেও কমিটিতে প্রায় ডজন খানেক বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাকে রাখা হয় তার অধীনে। এনিয়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা তার উপর ক্ষুদ্ধ হন।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে বস্তিবাসী, পথবাসী, ভাসমান ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে মালামাল বিতরণে ডিএসসিসির সচিব মো. মোস্তফা কামাল মজুমদারের গত ২৫ মার্চ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ১৩ নামের তালিকা বিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এ তালিকার ৩নং ক্রমিকে ডিএসসিসির সকল আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের রাখা হয়। জানা গেছে, করোনা উপলক্ষে কমিটি গঠনের পরই কমিটির আহ্বায়ক ইউসুফ আলী সরদারকে ডিএসসিসির কোষাগার থেকে দশ লাখ টাকা দেয়ার একটি অফিস আদেশ দেয়া হয়। এছাড়াও আরো একাধিক কর্মকর্তাতে এভাবে ৫ লাখ এবং ৮ লাখ করে দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু এ টাকা কি উপলক্ষে দেয়া হবে তা জানা যায়নি। এর আগে গত বছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময়ও নগরীতে অ্যারোসল সরবরাহ ও বিতরণের দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল তাকে। এসব অ্যারোসল সরবরাহের খবর খোদ সিটি কর্পোরেশনের ভাণ্ডার কর্মকর্তা নিজেই জানতেন না। এই অ্যারোসল বিতরণের দায়িত্ব মূলত স্বাস্থ্য বিভাগে থাকার কথা। কিন্তু মেয়রের পছন্দের লোক বিধায় ইউসুফ আলী সরদারকে দেয়া হয়েছিল। যার ফলে কেনাকাটা থেকে প্রতিটি খাতে ছিল অনিয়ম দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। মেয়রের অতি ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে গত প্রায় সাড়ে চার বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে ডিএসসিসির বিভিন্ন বিভাগের অঘোষিত কর্তৃত্ব করে গেছেন তিনি।

ডিএসসিসি’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ডিএসসিসিতে ইউসুফ আলী সরদার এতটাই ক্ষমতাধর যে তার বিরুদ্ধে কথা বললেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো। এর একাধিক প্রমাণও রয়েছে। তার দক্ষিণ সিটিতে ছিল বিশাল এক সিন্ডিকেট। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের অতি ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন। ফলে গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় তাকে নগরীতে অ্যারোসল বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ভাণ্ডার শাখা কিছুই জানতেন না। উল্লেখ্য, দুর্নীতির দায়ে গত রবিবার ইউসুফ আলী সরদারকে চাকুরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ি এটা করা হয়েছে। সূত্র: মানবজমিন

এমজে/