মাত্র ৩০০ আইসিইউ নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই

মাত্র ৩০০ আইসিইউ নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই

নভেল করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড আছে মাত্র ৩২৯টি। এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যা খুবই কম। ফলে চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। আক্রান্তদের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ রোগীকে এ সাপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ৫০টি আইসিইউ বেড স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই প্রয়োজনের তুলনায় আইসিইউ বেড অনেক কম। যে হারে রোগী বাড়ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ সাপোর্ট চাহিদা আরও অনেক বাড়বে। তারা বলেন, করোনা বাংলাদেশে আসবে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এমন ধারণা দিয়েছিল। এ অবস্থায় সরকার সেভাবে প্রস্তুতি নেয়নি। এখন এই রোগের ব্যাপক বিস্তার হচ্ছে। কিন্তু সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ হাসপাতালে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) নাসিমা সুলতানা বলেন, বিশাল জনসংখ্যার জন্য আইসিইউর এ সংখ্যাটা যথেষ্ট নয়। তবে বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালগুলো কোভিডের জন্য নেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আইসিইউর সংখ্যা আরও বাড়বে।

ডায়ালিসিস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে মেডিক্যাল কলেজগুলোয় যেখানে কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার অনেক মেডিক্যালে ডায়ালিসিস সুবিধা আছে। সেখানে কারও ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হলে আশা করি তারা অবশ্যই সেই সেবাও দিবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাজধানী ঢাকায় করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ৯টি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নেই। বাকি ৮টি হাসপাতালে ১৪৮টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এছাড়া করোনার জন্য নির্ধারিত ৫টি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ৩টিতে ১১টি আইসিইউ আছে। হলি ফ্যামিলি ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে কোনো আইসিইউ বেড নেই বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া রাজধানীর বাইরে ঢাকাসহ ৬৪ জেলায় করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ১৮১টি আইসিইউ বেড আছে। এর মধ্যে ৪৭ জেলায় কোনো আইসিইউ নেই। ঢাকা বিভাগের ৬টি জেলায় ৪৭টি, চট্টগ্রামের কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের ৭টি হাসপাতালে ৩৪টি আইসিইউ বেড আছে। এই বিভাগের আর কোনো জেলায় আইসিইউ নেই। ময়মনসিংহের এসকে হাসপাতালে ৭টি আইসিইউ আছে। এই বিভাগের আর কোনো জেলায় আইসিইউ নেই। বরিশাল বিভাগের মধ্যে শুধু বরিশাল জেলার দুটি হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ আছে। এছাড়া এ বিভাগের আর কোনো জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নেই। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের কোনো হাসপাতালে আইসিইউ নেই। শুধু সিলেটের দুটি হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড আছে। রাজশাহী বিভিাগের বগুড়ায় ৭টি ও রাজশাহী শহরের তিনটি হাসপাতালে ২১টিসহ মোট ২৮টি আইসিইউ আছে। খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা ও খুলনায় ১৮টি আইসিইউ বেড রয়েছে। বিভাগটির বাকি জেলায় আইসিইউ নেই। এছাড়া রংপুর বিভাগের দিনাজপুর ও রংপুরে ১৩টি আইসিইউ আছে। রংপুর বিভাগের আর কোনো জেলায় আইসিইউ নেই।

এরই মধ্যে দেশের কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ১৭টি হাসপাতালে ৫০টি আইসিইউ বেড স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ সুবিধা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য আইসিইউ বেডের সংখ্যাটা যথেষ্ট নয়। আমাদের ২ শতাংশ রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট দরকার। আমাদের কমপক্ষে এখন ১ হাজার আইসিইউ বেড দরকার ছিল। তিনি আরও বলেন, আইসিইউর পাশাপাশি আমাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার। এ বিষয়েও দ্রুত জোর দেওয়া প্রয়োজন।

১৭টি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, হাসপাতাগুলোয় ইতোমধ্যে আইসিইউ ভেন্টিলেটর বরাদ্দ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ হাসপাতালে সেগুলো স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আইসিইউ চালু করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও মেডিক্যাল গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ প্রয়োজন।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে ৫০টি আইসিইউ বেড, প্যাসেন্ট মনিটর, পালস অক্সিমিটার, এসি ও অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ বেশকিছু মেডিক্যাল ডিভাইসের কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক চিঠিতে জানানো হয়, বসুন্ধরা দুই হাজার বেডের হাসপাতালে ৭১টি আইসিইউ বেড থাকবে।

এদিকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালিসিস করার জন্য ঢাকা সিটির বাইরে দেশের কোথাও কোনো ব্যবস্থার নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকা সিটিতে ১০২টি ডায়ালিসিস মেশিন আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫০৯টি, রাজশাহী ২৪৩৬টি, চট্টগ্রামে ২০৬১টি, খুলনায় ২৭১২টি, বরিশালে ১৬২০টি, সিলেটে ৪৭৪টি, রংপুরে ১৭৯৬টি এবং ময়মনসিংহে ৯৫৪ টি।

এছাড়া সারা দেশে ৯ হাজার ৯ হাজার ৬৩৪টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ২৯০০টি। ঢাকা বিভাগে ১৩৯৬টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৩৮টি, ময়মনসিংহে ১০৩৮টি, বরিশালে ৪১৩টি, সিলেটে ৩৪৮টি, রাজশাহীতে ৯২৪টি, রংপুরে ৭২২টি এবং খুলনা বিভাগে ৭১৩টি আইসোলেশন বেড রয়েছে।সূত্র : আমাদের সময়

এমজে/