মুগদা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসককে বদলির নেপথ্যে হোটেল ব্যবস্থাপনা!

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসককে বদলির নেপথ্যে হোটেল ব্যবস্থাপনা!

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহ গোলাম নবী তুহিনকে দুই দায়িত্ব থেকেই অব্যাহতি দিয়ে বদলি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের করোনা চিকিৎসা বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। একইসঙ্গে কমিটির আরো দুই সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। আর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওএসডি করা হয়েছে অপর এক চিকিৎসককে।

প্রসঙ্গত, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য কাজ শেষে হোটেলে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ করেছিল পল্টনের হোটেল ৭১।

হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকরা হোটেল ৭১ থেকে গুলশানের ওরিয়েন্টাল হোটেলে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই অধ্যাপক শাহ গোলাম নবীকে গাজীপুরে বদলি করা হয়েছে। হাসপাতালের কোভিড-১৯ বিষয়ক কমিটির ফোকাল পারসন ডা. মাহবুবুর রহমান কচিকে বদলি করা হয়েছে জামালপুরে। আর হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক ও হাসপাতালের কোভিড-১৯ বিষয়ক কমিটির সদস্য ডা. মনি লাল আইচ লিটুকে বদলি করা হয়েছে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মোতালেবকে ওএসডি করা হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বদলি হওয়া একাধিক চিকিৎসক বলেন, তারা যদি কোনও অপরাধ করেন তাহলে তার তদন্ত হোক। এরপর যেকোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলে সেটি তারা মেনে নেবেন। কিন্তু এভাবে হোটেল ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে বদলি করা সম্মানজনক নয়।

একাধিক চিকিৎসক বলছেন, তারপরও যেহেতু সরকারি চাকরি করি, সরকারের আদেশ আমরা মেনে নেবো। তবে তারা মনে করছেন, এর নেপথ্যে যাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত তারাই এ বদলির ম্যাকানিজম করেছেন এবং এটা একটা ষড়যন্ত্র।

প্রসঙ্গত, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য কাজ শেষে হোটেলে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ করেছিল হোটেল ৭১।

একাধিক সূত্র জানায়, গত ২০ এপ্রিল থেকে ২০ মে পর্যন্ত হাসপাতালের ৩৫ জন চিকিৎসক হোটেল ৭১-এ কোয়ারেন্টিনের জন্য গেলে সেখানে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার শিকার হন। সেখানে কোনও সার্ভিস ছিল না, ঠিকমতো খাওয়া দেওয়া হতো না। হোটেল কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতো না। এসবের কারণেই চিকিৎসকরা হোটেল ৭১-এ যেতে অস্বীকৃতি জানান। তারা গুলশানের একটি হোটেল ওঠেন। পুরো বিষয়টিই তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়ে করেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিস্তারিত পরে জানানো হবে। তিনি বলেন, প্রশাসনিক কারণে তাদের বদলি করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে হোটেল ৭১-এ ফোন করা হলে রিসিপশন থেকে মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা কেন হোটেল ছেড়েছেন সেটা বলতে পারবো না। তবে তারা আমাদের সার্ভিসে সন্তুষ্ট ছিলেন। সেটা তারা নিজেরাই আমাদের বলেছেন। তবে এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না। তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের আগে হোটেল ম্যানেজমেন্টের কাউকে পাওয়া যাবে না। বৃহস্পতিবারের পরে তিনি আবার যোগাযোগ করতে বলেন।