স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় উপকূলবাসী, পাউবোর খবর নেই

স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় উপকূলবাসী, পাউবোর খবর নেই

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে ভেসে গেছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় বাঁধ। ধসে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, ভেসে গেছে মাছের ঘের। সবকিছু হারিয়ে উপকূলবাসীর এখন বেঁচে থাকার লড়াই। পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে স্বেচ্ছাশ্রমে উপকূলীয় বাঁধ রক্ষার কাজে নেমেছে এলাকাবাসী।

আম্ফানের আঘাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় গাবুরা ইউনিয়ন পুরোপুরি বিধ্বস্ত। গোটা ইউনিয়ন এখন পানির নিচে। মঙ্গলবার (২৬ মে) সকাল থেকে কয়েক হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ কাজে নেমেছেন। গাবুরা ইউনিয়নের লেবুগুনিয়া এলাকায় বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন এসব মানুষ। তবে বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো এখনও দেখা যায়নি।

লেবুগুনিয়া এলাকার ৮ বছর বয়সী রাসেল। ঈদের কোনো আনন্দ নেই তার। রাসেল বলে, ঈদের কোনো আনন্দ করতে পারলাম না। নৌকায় করে চলাফেরা করতে হচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমাদের। আব্বু সকালে বাঁধ রক্ষার কাজে গেছেন।

গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, লেবুগুনিয়া গ্রামের কপোতাক্ষ নদীর বাঁধ ভেঙে গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এক কিলোমিটারেরও বেশি বাঁধ ভেঙে গেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। কোনো খাদ্য সামগ্রী এখনও পাননি। বাড়িতে খাবারও নেই। খুব কষ্টে আছেন।

তিনি বলেন, আমাদের ত্রাণের প্রয়োজন নেই। বার বার আমরা বলেছি, ত্রাণ দিতে হবে না ভালো একটা বাঁধ করে দেন আমাদের। কেউ আজও দেয়নি।

লেবুগুনিয়া গ্রামের বৃদ্ধ রাশেদ বলেন, খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। পরিবারের কেউ ঈদের আনন্দ করতে পারিনি। বাড়িতে খাবার নেই। খুব কষ্টে রয়েছি। কেউ এখনও আমাদের দেখলো না। আমরা চাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের একটু দেখুক।

লেবুগুনিয়া এলাকায় বাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ভাটার সময় পানি কমছে আবার জোয়ারের পানি বাড়ছে। নদীর জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিলেমিশে চলছে আমাদের জীবন। সরকারিভাবে এখনও বাঁধ রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, বাঁধ রক্ষায় গ্রামবাসীকে নিয়ে কাজ করছি। মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী এলাকায় কপোতাক্ষ নদীর বাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন এলাকাবাসী।

পাতাখালী গ্রামের বাসিন্দা সাজিদুর রহমান বলেন, আইলায় যে জায়গায় বাঁধ ভেঙেছিল ঠিক সেখানেই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে বাঁধ ভেঙেছে। আমরা মেরামতের চেষ্টা করছি। এছাড়া বেঁচে থাকবো কি করে।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা গ্রামের আরেক বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাটার সময় মেরামত করছি, জোয়ারের সময় আবার ভেঙে যাচ্ছে।

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল্লাহ্ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খামখেয়ালিপনার কারণে আজ আমাদের এই দুর্দিন। বার বার একই ঘটনা ঘটলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে জেলার উপকূলব্যাপী ৫৭.৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এলাকাবাসী কাজ করছে। আমরা সিমপেথিক ব্যাগ, বাঁশ দিচ্ছি। এছাড়া কিছু জিও ব্যাগও দেয়া হবে। এলাকাবাসী যে বাঁধটি দিচ্ছে সেটি খুব সাময়িক। এটা আবার ভেঙে যাবে। ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু হবে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, গ্রামবাসীর সহযোগিতায় বাঁধ রক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। আমরা সাতক্ষীরা উপকূলে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে, বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ও বাঁশ যা লাগবে তারা সেগুলো সরবরাহ করবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমি পিআইসি কমিটি করে দিয়েছি। তারা দেখবে সেখানে কী পরিমাণ খরচ বা বরাদ্দ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এখন জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসী একযোগে কাজ করছেন। আমি বিশ্বাস করি এই দুর্যোগ আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।