১৬ কোটি মানুষের জন্য নেই সরকারি কোনও ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স’

১৬ কোটি মানুষের জন্য নেই সরকারি কোনও ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স’

দেশে লাইফ সাপোর্ট সুবিধাসহ সরকারি কোনও মোবাইল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স’ নেই। সাতটি হাইটেক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেগুলোকে পুরোপুরি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স বলা যায় না। বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কয়েকটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেগুলোর খরচ অনেক বেশি। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পেতে হলে রোগীকে ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চুক্তি করতে হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শ্বাসকষ্টের রোগীকে মানসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স সেবা সঠিক সময় দিতে পারলে তার জীবনের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা কম থাকায় রোগীদের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় নিতে হচ্ছে। এজন্যও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রের ভাষ্য, দেশে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স থাকা দরকার। কখনও কখনও মুমূর্ষু রোগীদের লাইফ সাপোর্ট দিয়ে স্থানান্তর করতে হয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও দুটি হাইটেক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেই।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন। এর আগে গত ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ এপ্রিল তাকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় ৮ এপ্রিল সেখান থেকে পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে আনা হয়। তবে তাকে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসতে পরিবারকে বেগ পেতে হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের দাবি করা হলেও তার ব্যবস্থা করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে পরিবারের উদ্যোগে একটি বেসরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়।

চিকিৎসক মঈন উদ্দিনের পরিবারের মতো অনেকেই গুরুতর অসুস্থ রোগী স্থানান্তর নিয়ে জটিলতায় পড়েন। কারণ, দেশে সরকারি কোনও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই, আর বেসরকারি যা রয়েছে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে যেসব সুবিধা থাকে

মোবাইল আইসিইউ বা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স হলো একটি সুসজ্জিত নিবিড় পরিচর্যা অ্যাম্বুলেন্স। কোনও হাসপাতালের আইসিইউতে যা যা থাকে, মোবাইল আইসিইউ বা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সেও সেসব সুবিধা থাকে। এই অ্যাম্বুলেন্স যাত্রাপথে রোগীকে সবরকম সুবিধা দিতে সক্ষম। এটির ভেতরে চিকিৎসক, উচ্চ প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক্স ও নার্সদের জন্য জায়গা রয়েছে। মোট কথা, এটি অত্যাধুনিক অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট (এএলএস) সংযুক্ত মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি দিয়ে সুসজ্জিত। ভেতরে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ও আলো থাকে।

দেশে নেই কোনও সরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে সরকারি কোনও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি সাতটি হাইটেক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এগুলো তুরস্ক থেকে আনা হয়েছে। তবে এগুলো আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নয়। এরকম আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স আনার প্রস্তাব রয়েছে। এই সাতটি অ্যাম্বুলেন্স দেশের বড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোকে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এমজে/