নাসিমকে নিয়ে কটূক্তি, রাবি শিক্ষক বরখাস্ত

নাসিমকে নিয়ে কটূক্তি, রাবি শিক্ষক বরখাস্ত

সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ‘মানহানিকর’ তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার গ্রেপ্তারের দিন ১৮ জুন থেকে তিনি সাময়িক বরখাস্ত বলে বিবেচিত হবেন।’

কাজী জাহিদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবেও পরিচিত তিনি। বর্তমানে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে অবস্থান করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুন রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট তাপস সাহা বাদী হয়ে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোহাম্মদ নাসিমের বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগ করা হয়।

মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ১৭ জুন দিবাগত রাতেই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে গ্রেপ্তার করে মতিহার থানা পুলিশ।

জাহিদুর রহমান রাবির শিক্ষক হলেও নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের পদে ছিলেন। তবে নাসিমকে কটূক্তির পর গত ১৬ জুন জাহিদুর রহমানকে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১ জুন রাতে মোহাম্মদ নাসিম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ‘তার অসুস্থতা নিয়ে’ ব্যঙ্গ করে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে স্ট্যাটাস দেন শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান। সেই স্ট্যাটাসে সরাসরি মোহাম্মদ নাসিমের নাম উল্লেখ না থাকলেও স্পষ্ট তাকে ইঙ্গিত করে ‘বিষোদাগার’ করার অভিযোগ ওঠে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে ‘উগ্র’ ভাষা ব্যবহার করে জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিমকে তিনি পরামর্শ দেন- ‘করোনাকে ঘুষ দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসার’!

পরদিন ২ জুন বিকেলে ফের স্ট্যাটাস দেন কাজী জাহিদুর। সেখানেও নাম উল্লেখ না করে চিকিৎসা খাত নিয়ে সমালোচনা করেন। ‘তার আমলে’ শব্দের ব্যবহারে কৌশলে মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করেন। সেখানে ‘অসুস্থ নাসিমকে’ ইঙ্গিত করে অক্সিজেনের পরিবর্তে তাকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি।

আর ৫ জুন ‘কাজ করে না এমন ভেন্টিলেটর দিয়ে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক’ এমন বাক্যও লেখেন কাজী জাহিদুর। ওই স্ট্যাটাসে সবশেষে নাসিমকে ইঙ্গিত করে ‘এসব চোর’ বলে সম্বোধন করা হয়।

ওই পোস্টগুলো প্রথমে সেভাবে সামনে না আসলেও মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক একই ধরনের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর এটা নিয়েও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুরের শাস্তির দাবিও তুলেছেন তারা।

গত ১৫ জুন বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আব্দুস সোবহানের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

এমজে/