পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যায় জামালপুর জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় ২৯ সেন্টিমিটার বেড়ে সোমবার সকালে ৬টায় বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান জানান, সোমবার সকাল ৬টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি ২০ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে স্বাভাবিক পানির স্তর হচ্ছে ১৯ দশমিক ৫০।

এদিকে দ্রুত পানি বাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যেই জেলার ৬টি উপজেলা ২৫টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

সবচেয়ে বেশি বন্যায় কবলিত হয়েছে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ইসলামপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এখন পানি নিচে।

প্রশাসনের সহযোগিতায় দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

এদিকে ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউপির দক্ষিণ চিনাডুলি, দেওয়ানপাড়া, ডেবরাইপ্যাচ, বলিয়াদহ, পশ্চিম বামনা, বেলগাছা ইউপির কছিমার চর, দেলীপাড়, গুঠাইল, সাপধরী ইউপির আকন্দপাড়া, পূর্ব চেঙ্গানিয়ারসহ নদীপাড়ের আরও বেশকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। পার্থশী, নোয়ারপাড়া ও পলবান্দা ইউপির লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে।

পানি বাড়ায় বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউপির মদনের চর, বিলেরপাড়, ডেরুরুবিল, চর গাজীরপাড়া, উত্তর আচ্চাকান্দি, কতুবেরচর, বাংগালপাড়া, নয়াবাড়ি, চরকামালেরবার্ত্তী, চর আইরমারী গ্রাম, মেরুরচর ইউপির মাইছানিরচর, ভাটি কলকিহারা, উজন কলকিহারা, পূর্ব কলকিহারা, চিনারচর, বাঘাডুবি, খেওয়ারচর, ঘুঘুরাকান্দি, ফকিরপাড়া, নীলক্ষিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর, সাজিমারা, নয়াপাড়া, পাগলাপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এছাড়া সরিষাবাড়ির আওনা, কুলপালচর, কুমারপাড়া, নলসন্ধ্যা, মিরকুটিয়া, কাজলগাঁও, দমোদরপুর, চরপোগলদঘা, কালিপুর, শ্যামপুর, মালিপাড়া, বিন্নাফৈর, টাকুরিয়া,মানিক পোটল, গোবিন্দ পোটল, চর সরিষাবাড়ি, চর নান্দিনা, আদ্রা, ছাতারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।

ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, এই ইউপির নতুনচরাঞ্চলে আষাঢ় মাসেই অতিরিক্ত বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে সাপধরীর প্রজাপতি, চরশিশুয়া, চরনন্দনের পাড়া, আমতলি, কাশারীডোবা, কটাপুর, ইন্দুল্যামারী, আকন্দপাড়া, কোদাল ধোয়া, মণ্ডলপাড়া, বিশরশি ও চেঙ্গানিয়ায় অসংখ্য কৃষকের পাট ও আউশ ধানক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব চরাঞ্চলের অন্তত পাঁচ হাজার বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যেই বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।দুর্ভোগের শেষ নেই জামালপুরবাসী। ছবি: বাংলানিউজঘোষেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান জানান, এই ইউপি চরাঞ্চল হওয়ায় একটু বৃষ্টি পানিতেই বন্যা হয়ে যায়। বন্যা মোকাবিলার জন্য আংশিক প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও সহযোগিতা পেলেই পুরোপুরি প্রস্তুতি নেবো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৩২টি গ্রামের ৭ হাজার ৮৭০টি পরিবারের প্রায় ৩১ হাজার ৪৮৫ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারিভাবে ১০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ও পানিবন্দি মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ, শুকনো খাবার, ওষুধসামগ্রী মজুদ রয়েছে।

ইসলামপুর নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, নদীর পানি বাড়ায় ও আগাম বন্যার বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। বন্যার পানি বাড়তে থাকলে সবাইকে নিয়ে বন্যা মোকাবিলায় কাজ করা হবে। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ ইউএনও সুলতানা রাজিয়া জানান, ইতোমধ্যেই উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া আটটি ইউনিয়নই এখন পানির নিচে। ১১৬টি পরিবারকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নেওয়া হচ্ছে।

জামালপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এনামুল হক জানান, জেলার সদর ব্যতিত সব উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বন্যায় মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এমজে/