সীমান্তে ফের ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমার সৈন্য, বাংকার খনন

সীমান্তে ফের ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমার সৈন্য, বাংকার খনন

কক্সবাজার, ৪ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে রবিবার আবার সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মিয়ানমার। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সীমান্তের শূন্যরেখার কোনারপাড়া অংশে পাঁচ শতাধিক সেনা ও বিজিপি সদস্য হাজির হন। তারপর তাদের একটি অংশ কাঁটাতারের বেড়ার পাশে (মিয়ানমার অংশে) টহল শুরু করে।

কিছু সেনাসদস্য কাঁটাতারের পাশের পাহাড়ে চৌকিতে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে অস্ত্র তাক করে থাকেন। এ সময় পাহাড়ের ঢালুতে কিছু লোককে বালুর বস্তা ফেলে পরিখা ও মাটি খনন করে বাংকার তৈরি করতে দেখেছেন শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা। তবে বেলা দেড়টার দিকে টহলরত সেনা ও বিজিপি সদস্যরা পাহাড়ে ঢুকে পড়েন।

এক দিন বিরতি দিয়ে সীমান্তে আবারো সেনাসমাবেশ ঘটানোয় শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। রবিবারও শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়ার জন্য তিন দফা মাইকিং করে সতর্ক করেছে মিয়ানমার। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করেনি।

শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ (৫১) বলেন, একদিন বিরতি দিয়ে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ ছয়টি পিকআপে করে আড়াই শতাধিক সেনাসদস্য সীমান্তে জড়ো হন। এ সময় গাড়ি থেকে ভারী অস্ত্র নামাতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেনাদের সঙ্গে যোগ দেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির আরো কয়েকজন সদস্য।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মিয়ানমার আবারো পাঁচ শতাধিক সেনাসমাবেশ ঘটিয়েছে। যদিও মিয়ানমারের দাবি, এটা তাদের নিয়মিত টহলের অংশ। কাঁটাতারের বেড়া সংস্কারের কাজও করছে তারা।

বিজিবি ও শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা জানান, সকালে সমবেত হওয়া সেনারা বেলা দেড়টার দিকে পাহাড়ের উল্টো দিকে চলে যায়। আধা ঘণ্টা পর সেনাবাহিনীর আরেকটি দল এসে সেখানে অবস্থান নেয় এবং বিকাল ৪টার দিকে তারাও চলে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আসে সেনাবাহিনীর আরো একটি দল। তারা শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের পেছনে তৈরি কাঁটাতারের বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে এ পাড়ের পরিস্থিতি নজরদারি করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সতর্ক করে তিন দফায় মাইকিং করা হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেনাসমাবেশ ঘটায়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কাঁটাতারের বেড়ার পাশের সড়কে (মিয়ানমার অংশে) এবং পাহাড়ি চৌকিতে (কাঁটাতারের বেড়ার ১৫০ গজের মধ্যে) ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিতে দেখা যায় দেশটির তিন শতাধিক সেনাকে। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। শুক্রবার বিকালে ঘুমধুম সীমান্তের মৈত্রী সেতু এলাকায় বিজিবি এবং বিজিপির মধ্যে দেড় ঘণ্টা পতাকা বৈঠক হয়। এরপর সীমান্তে উত্তেজনা কমে আসে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, কড়া প্রতিবাদের মুখে সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে সেনাদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু রবিবার হঠাৎ করে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্য উপস্থিত হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের পাহাড়ের বিভিন্ন আস্তানায় সে দেশের সেনাবাহিনীর অবস্থান আগের মতোই আছে। তবে মাঝেমধ্যে কাঁটাতারের পাশে এসে তারা তাদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে। এতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা আতঙ্কে আছেন। এই শিবিরে আছেন ৬ হাজার ২২ জন রোহিঙ্গা। যাদের বাড়ি আশ্রয়শিবিরের পেছনে রাখাইন রাজ্যের ১২টি গ্রামে।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, সকাল থেকে অন্তত ৫০০ সৈন্যের অবস্থান ছিল তমব্রু সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে। তাদের বিপরীতে বিজিবিও টহল জোরদার করেছে। ‘মিট’ পতাকা নিয়ে বিজিবি দল কোনারপাড়া হয়ে তুমব্রু জিরো পয়েন্টের দিকে এগিয়ে গেলে, মিয়ানমার সৈন্যরা ছয়টি ট্রাকে করে সেখান থেকে সরে পড়েন। তিনি বলেন, ‘দুদিন আগে আমরা সীমান্তে অস্থিরতা দেখেছি, সে তুলনায় সীমান্তের অবস্থা এখন অনেক ভালো এবং শান্ত।’

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবির সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তারা সব সময় সতর্ক আছে। এখন পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি হয়নি। মাতৃভূমিতে সে রকম কিছু হলে বিজিবি প্রস্তুতি আছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২৩০ঘ.)