ঢাকার বাইরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রেডজোন চিহ্ণিত না করায় অভিযোগ

ঢাকার বাইরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রেডজোন চিহ্ণিত না করায় অভিযোগ রাজাবাজরে লকডাউন নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রহরা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের পর এবার ওয়ারী এলাকাও রেডজোন চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে।

শনিবার থেকে সামনের ২১ দিন ওই এলাকায় শুধুমাত্র ওষুধের দোকান ছাড়া সরকারি বেসরকারি অফিস, কারখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় সব বন্ধ থাকবে।

এভাবে ঢাকায় চিহ্নিত বাকি ৪৫টি রেডজোন এলাকাও দ্রুত লকডাউনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তবে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় এমনও অনেক এলাকা রয়েছে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও রেডজোন চিহ্নিত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

যেমন কুমিল্লায় সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন কয়েকটি এলাকা রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের বাইরে বিভিন্ন এলাকা ঝুঁকির মুখে থাকলেও সেদিকে প্রশাসনের নজর নেই বলে অভিযোগ কুমিল্লার দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা সামিয়া নূরের।

‘আমাদের দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছিল। এখনও অনেকের মধ্যে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, মানে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এলাকার মানুষের কোন সচেতনতা নেই। তারা ইচ্ছামতো ঘুরে-বেড়াচ্ছে। কেউ টেস্ট করায় না বলে বোঝা যায় না। যদি এটাকে রেডজোনে ফেলে লকডাউন করা হতো তাহলে মানুষ বের হতো না।’, বলেন মিস নূর।

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই জোনিং পদ্ধতি পুরো দেশজুড়ে একইসাথে বা কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কার্যকর করা না গেলে সুফল পাওয়া যাবে না।

কখন একটি এলাকা রেডজোন চিহ্নিত করা হয়
সাধারণত কয়েকটি দিক বিবেচনা করে একটি এলাকাকে রেডজোন ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ক্ষেত্রে সর্বশেষ ১৪ দিনে যদি প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৬০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় এবং অন্য জেলাগুলোয় যদি প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়, তাহলে ওইসব এলাকাকে রেড জোনের আওতায় আনা হবে।

এছাড়া কোন এলাকায় সাত দিনের মাথায় শনাক্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে পড়লে, মানুষের চলাচল বেশি থাকলে, টেস্টিং সেবার অভাব থাকলে, ওই এলাকাগুলোকেও লকডাউনে আনার কথা ভাবা হয়। কিন্তু দেশব্যাপী প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দ্রুত রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন না করলে এই পদ্ধতি কোন সুফল বয়ে আনবে না বলে জানিয়েছেন আইডিসিআর এর উপদেষ্টা মোস্তাক হোসেন।

‘রেড জোন-ইয়েলো জোন-গ্রিন জোন এটা একসঙ্গে বা কাছাকাছি সময়ে সারা বাংলাদেশে কার্যকর করতে হবে। নাহলে অতি সংক্রমিত এলাকা থেকে কম সংক্রমিত এলাকায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

‘শুধু চিহ্নিত করলেই হবে না। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি রেডজোন এলাকায় স্বাস্থ্য বেষ্টনী কার্যকর করতে হবে। না হলে লাভ হবে না।’ বলেন মি. হোসেন।

রেডজোন এলাকা থেকে বের হতে বা প্রবেশ করতে গেলে বিস্তারিত লিখে রাখা হয়।
গত ২১শে জুন কুমিল্লা, বগুড়া, যশোর, মুন্সীগঞ্জসহ বাংলাদেশের ১০টি জেলায় রেডজোন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে এই ম্যাপিং এর কাজটি করছে মূলত সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

অন্যান্য জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা হিসেব করে সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই সমন্বিত হয়ে রেডজোন চিহ্নিত করছেন বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহ পরিচালক আয়েশা আক্তার।

তবে তারা মূলত ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকানোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

মিসেস আক্তার বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বেশি মানুষ বসবাস করে। যার ফলে এখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই এলাকাগুলোয় প্রাধান্য বেশি দেয়া হচ্ছে। জেলা উপজেলাগুলোয় মানুষের সংখ্যা এতো বেশি না। সেখানে ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম।’

তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

তবে স্থানীয় মানুষরা যদি মনে করেন তাদের এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনেক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে তাহলে তারা বিষয়টি স্থানীয় সিভিল সার্জন বা জেলা প্রশাসকের কাছে জানালে ওই এলাকাকেও নজরদারির আওতায় আনা হবে বলে জানান মিসেস আক্তার।

কর্তৃপক্ষ সার্বিক পর্যবেক্ষণের পরে যদি মনে করেন এই এলাকা জোনিং এর আওতায় আনা প্রয়োজন, তাহলে সেটা বিবেচনা করা হবে বলেও তিনি জানান।