করোনাকালে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল

বিদ্যুতের বিলম্ব মাশুল মওকুফের সময় বাড়ানোর চিন্তা

বিদ্যুতের বিলম্ব মাশুল মওকুফের সময় বাড়ানোর চিন্তা

করোনাকালে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল নিয়ে গ্রাহকদের সমস্যা হওয়ায় আরো কিছু দিন আবাসিক গ্রাহকদের বিলম্ব মাশুল মওকুফের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদ। রবিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ড. সুলতান আহমেদ বলেন, কোনো গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কাউকেই ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হবে না। যেসব অভিযোগ এসেছে, তাদের বিল সমন্বয় করা হচ্ছে। আরো অভিযোগ এলে সেগুলোও সমন্বয় করা হবে।

বিদ্যুৎ সচিব আরো জানান, অতিরিক্ত বিল নিয়ে তদন্ত কমিটির সুপারিশে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির ২৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা রকম বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সঙ্কটে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে বিলম্ব ফি মওকুফ করা হয়েছিল। সেই হিসাবে জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে পুরোনো বিল দিয়ে দেয়ার কথা ছিল।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার না দেখে প্রকৃত বিলের কাছাকাছি একটি অনুমিত বিল তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এতে অনেকের অন্যবারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিল আসে।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর সেইসব ‘ভুতুড়ে বিল’ নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ দেখা দিলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ৬ কোম্পানিগুলোতে কী ঘটেছিল তার একটি তদন্ত প্রতিবেদন জানাতে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। ‘বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত বিতরণ সংস্থা/কোম্পানিগুলোর প্রদত্ত প্রতিবেদন’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে বিল সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাখ্যা।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়, বিতরণ প্রতিষ্ঠান পিডিবির মোট ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জন গ্রাহকের মধ্যে বিল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে দুই হাজার ৫৮২টি; যা মোট গ্রাহকের ০.০৮ শতাংশ। আরইবির মোট ২ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে অভিযোগ করেছেন ৩৪ হাজার ৬৮১ জন, যা মোট গ্রাহকের ০.১২ শতাংশ। ডিপিডিসির মোট ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন গ্রাহকের মধ্যে অভিযোগ পাওয়া গেছে ১৫ হাজার ২৬৬টি, যা মোট গ্রাহকের ১.৬৫ শতাংশ। ডেসকোর ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে অভিযোগ পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৬৫৭টি, যা পোস্ট পেইড গ্রাহকের ০.৭৯ শতাংশ। (পোস্ট পেইড গ্রাহক ৭১০,৬৬৩ জন)। নেসকোর মোট ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭৮ জন গ্রাহকের মধ্যে অভিযোগ পাওয়া গেছে দুই হাজার ৫২৪টি, যা মোট গ্রাহকের ০.১৬ শতাংশ। ওজোপাডিকোর মোট ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে অভিযোগ পাওয়া গেছে ৫৫৫টি, যা মোট গ্রাহকের ০.০৪৫ শতাংশ।

বিদ্যুৎ সচিব বলেন, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে প্রাপ্ত অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা হচ্ছে এবং হবে। কোনো অবস্থাতেই ব্যবহৃত বিদ্যুতের বেশি বিল গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিল নিয়ে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির স্বার্থে আবাসিক গ্রাহকদের বিলম্ব ফি মওকুফের সময়সীমা আরো কিছুদিন বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আালোচনা হচ্ছে। আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিলম্ব ফি মওকুফের সময় বাড়ানোর চিন্তা করা হলেও অন্যান্য শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য তেমন চিন্তা এখনও নেই বলে জানান সচিব।

অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, মহামারীর মধ্যে মিটারের স্ন্যাপশট নেয়ার পরিবর্তে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ডাটা সংগ্রহ ও ইনপুট দেয়ার কারণে এমন ভুল হয়েছে। পদ্ধতিগত ত্রুটির পাশাপাশি মানবিক ভুলও পরিলক্ষিত হচ্ছে। জুন মাসের পর থেকে ছয়টি বিতরণ সংস্থার সর্বত্র মিটার দেখে আগের পদ্ধতিতে রিডিং নিয়ে বিল করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়।

‘ভূতুড়ে বিল’ তদন্তে গঠিত টাস্ক ফোর্সের সুপারিশের আলোকে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির ২৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদ।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যেখানে অনুমাননির্ভর বিল করার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, সেখানে কী অভিযোগের ভিত্তিতে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে-এক সংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, এসব ঘটনায় কারও বড় ধরনের কোনো দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে কি না, সেটাই দেখা হচ্ছে। কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তির মুখে না পড়ে এবং কোনো দোষী ব্যক্তি যেন ছাড় না পেয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। তদন্ত, সাময়িক বরখাস্ত কিংবা কারণ দর্শানোর নোটিসকে কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিচালন পদ্ধতি হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে করে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই।

পিডিবির চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন, আরইবির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন, পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইনসহ বিতরণ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন।