খুলনায় ২ পাটকল শ্রমিক নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

খুলনায় ২ পাটকল শ্রমিক নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার রাতে প্লাটিনাম জুট মিলের সামনে শ্রমিকদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

উৎপাদন বন্ধের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার রাতে প্লাটিনাম জুট মিলের সামনে শ্রমিকদের ভিড়। ছবি: দীপংকর রায়

খুলনায় সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের দুইজন শ্রমিক নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শ্রমিক নেতারা হলেন- বন্ধ ঘোষিত ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিক ও পাটশিল্প রক্ষা যুব জোটের আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান এবং প্লাটিনাম জুবিলি জুটমিলের শ্রমিক ও পাটশিল্প রক্ষা যুব জোটের উপদেষ্টা নূর ইসলাম। গত রোববার রাতে তাদেরকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়।

নূর ইসলামের ছেলে মো. জুয়েল বলেন, আমাদের বাসা খুলনা শহরের খালিশপুর এলাকায়। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে কিছু লোক আসে আমাদের বাসায়। তারা বলতে থাকে- দরজা খুলুন আগুন লেগেছে।

আমরা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিসের লোক। তারপর চোখের পলকে বাবাকে নিয়ে চলে যায়।

অলিয়ার রহমানের ছেলে নাঈম শেখ জানান, গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে নগরের খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী গ্রামের বাড়িতে নয়জন লোক এসে ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে। তাদের হাতে ওয়্যারলেস ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। আমরা দরজা খুললে তারা বলে আব্বাকে নিয়ে মিলে যাবে। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে নিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে চলে যায়। আমরা থানায় ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি, তারা বলেছে রাতে তাদের কোনো অভিযান হয়নি।

শ্রমিক নেতাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা শাখার সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম।

বিবৃতিতে তারা বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিকদের সামান্যতম বিরোধিতাকেও দমন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটের বিরুদ্ধে, বদলি শ্রমিকসহ সকল পাটকল শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে ওই দুজন লড়াই করছেন। সেই আন্দোলন দমন করার জন্যই রাতের অন্ধকারে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের পরিবার এখনও জানে না যে তারা কোথায় আছেন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি মিলের কিছু বদলি শ্রমিক খালিশপুরে গোপনে মিটিং করেছে বাম দলগুলোর সঙ্গে। তাদের কেউ কেউ আটক হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তারা আমাদের নেতা না। মিলের শ্রমিকরা এখন শান্ত। যদি নিয়ে যায় তবে কারা ধরে নিয়ে গেছে, কি কারণে ধরে নিয়ে গেছে তা আমি জানি না।’

এ ব্যাপারে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাব্বিরুল আলম বলেন, আমরা কোনো শ্রমিক নেতাকে আটক করিনি। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। কেউ কেউ আমাদেরকে বিষয়টা বলছে তবে আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো শ্রমিক নেতাকে আটক করিনি।