বৃহত্তম টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স আবেদন প্রত্যাখ্যান ফিলিপাইনে

বৃহত্তম টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স আবেদন প্রত্যাখ্যান ফিলিপাইনে

অন্যতম বৃহৎ সম্প্র্রচার মাধ্যম এবিএস-সিবিএন’কে নতুন লাইসেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফিলিপাইন। গত মে মাসে তাদের সম্প্রচার জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়। তাদের আর্থিক সহায়তাকারীরা ২৫ বছর মেয়াদে লাইসেন্সের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টারি কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সমালোচকরা বলছেন, এই চ্যানেলটি সরাসরি প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে’র সমালোচনা করেছে। এ কারণে তাদের লাইসেন্স প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণার সময় রড্রিগো দুতের্তের প্রচারণা বিষয়ক বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করতে রাজি হয় নি এবিএস-সিবিএন। এরপর গত ৪ঠা মে তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

ফলে ওই দিন প্রথমবার তাদের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এই সম্প্রচার মাধ্যমটি পরিচালনা করে কয়েক ডজন রেডিও এবং টেলিভিশন স্টেশন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

শুক্রবার পার্লামেন্টে তাদের লাইসেন্স নবায়নের আবেদনের ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি প্রকাশ পায় তাতে দেখা যায়, ওই টিভি নেটওয়ার্কের সমর্থকরা ফিলিপাইন কংগ্রেসের বাইরে ‘ডিফেন্ড প্রেস ফ্রিডম’ এবং ‘স্টপ দ্য এটাকস’ লেখা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

লাইসেন্স প্রত্যাখ্যান করা নিয়ে শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, আগে এই দেশটিকে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং এ অঞ্চলের গণতন্ত্রের দুর্গ হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু সেই দেশে এ দিনটি মিডিয়ার স্বাধীনাতার জন্য একটি কালো দিন। লাইসেন্স নবায়নের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে কংগ্রেশনাল প্রতিনিধিরা বিস্ময়করভাবে আপত্তিকর আচরণ প্রদর্শন করেছেন। এতে দুতের্তে যে ফিলিপাইনের সংবাদ মাধ্যমকে মারাত্মকভাবে সীমিত করেছেন তা তারা ফুটিয়ে তুলেছেন।

বিরোধী দলীয় এমপিরা বলেছেন, ওই টিভির লাইসেন্স না দেয়ায় করোনা ভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইকে খর্ব করে দেবে। এরই মধ্যে ফিলিপাইনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ। মারা গেছেন ১৩০০। উল্লেখ্য, টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনের মাধ্যমে কমপক্ষে এক কোটি ৫০ লাখ মানুষের দ্বারে নিয়মিত পৌঁছে যেত এবিএস-সিবিএন। এটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫৩ সালে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ হাজার মানুষের। শুক্রবার পার্লামেন্টারি কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আপিল করতে পারবে।

সংবিধানের অধীনে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় নিশ্চয়তা রয়েছে ফিলিপাইনে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা ফ্রিডম হাউজের মতে, বিশ্বে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক যেসব দেশ আছে তার মধ্যে অন্যতম ফিলিপাইন। অন্যদিকে মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের অধিকারের দাবিতে গঠিত সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর মতে, সাংবাদিকদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে কখনো কখনো প্রাইভেট মিলিশিয়াদের ভাড়া করেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। এক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি দায়মুক্তি পান।

গত মাসে জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম র‌্যাপলারের প্রধান মারিয়া রেসাকে কুৎসা রটনার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এটাকে বহু মানুষ দেখছেন ওই সাইটটিকে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্য হিসেবে। তার সংবাদ মাধ্যম সরকারের বড় সমালোচক। বিশ্বে ১৮০টি দেশের মধ্যে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ফিলিপাইনের অবস্থান ১৩৬তম।

এবিএস-সিবিএনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃটেনের বিবিসির মতো। তাদের টিভি ও রেডিওর ইতিহাস ৭০ বছরের বেশি। এর মধ্য দিয়ে সব শ্রেণির মানুষকে তারা বিনোদন এবং সংবাদ পরিবেশন করে আসছিল। তবে প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তের সমর্থকরা মনে করেন, এবিএস-সিবিএন প্রেসিডেন্ট রড্রিগোর বিরোধী। তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করে তারা।