এবার বিজিবির বিরুদ্ধে মিথ্যা বিবৃতি দিল বিএসএফ!

এবার বিজিবির বিরুদ্ধে মিথ্যা বিবৃতি দিল বিএসএফ!

লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের মধ্যে গত মাসের মাঝামাঝি সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে একের পর এক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। বিশেষ করে চীন কর্তৃক বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার পর থেকে ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশকে হেয় করে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।

বাংলাদেশকে দেয়া চীনের শুল্ক সুবিধার বিষয়টিকে ‘খয়রাতি’ হিসেবে উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করে দেশটির শীর্ষ স্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম। ভারতীয় মিডিয়ার এমন নেতিবাচক খবরে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হলে আনন্দবাজার পত্রিকা ক্ষমা চেয়েছিল।

আনন্দবাজার ক্ষমা চাইলেও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)কে জড়িয়ে একের পর নেতিবাচক খবর প্রকাশ করেছে দেশটির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এবার বিজিবির বিরুদ্ধে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বিবৃতি দিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এর আগে গত ৭ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকায় বিজিবির বিরুদ্ধে ‘অরক্ষিত জমিতে পা পড়ছে বাংলাদেশির’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে বলা হয়, ভারতের মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার সীমান্তে কয়েক হাজার একর জমি বিজিবির সহায়তায় বাংলাদেশিরা দখল করছে।

আনন্দবাজার দাবি করে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ নাকি স্থানীয় আবাদি মানুষদের চাষাবাদ করতে না দেয়ায় বাংলাদেশিরা বিনা বাধায় জমি দখল করে চলেছে। তাদের অভিযোগ ভারতীয় চাষিদের ওই জমিতে চাষ করাই লাটে উঠেছে। অনেক সময়ে মাঠ থেকে ভারতীয় চাষীদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিজিবি নাকি আটকে রাখছে।

আনন্দবাজার পত্রিকার ওই খবরে পর সোমবার (১৩ জুলাই) বিজিবির বিরুদ্ধে আবারও খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টাইম। তবে ইন্ডিয়া টাইম বিএসএফ এর একটি বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়েছে।

তবে আনন্দবাজার পত্রিকার ওই সংবাদের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। একইসঙ্গে সংবাদটিকে সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও উল্লেখ করেছে বিজিবি। শুক্রবার (১০ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানায় বিজিবি।

এর পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস “ভারত থেকে গরুপাচারে সায় দেয় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী, ‘এই গরুর মাংস ক্ষতিকর’ বিস্ফোরক দাবি বিএসএফ-এর” শিরোনামে সোমবার দুপুরে প্রকাশিত খবরে দাবি করেছে, বিএসএফ এর পক্ষ থেকে এই প্রথম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গবাদিপশু পাচার নিয়ে সরকারি বক্তব্য দেওয়া হল। এই পশুপাচারকে ‘অমানবিক, নির্দয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহী’ কার্যকলাপ বলেও উল্লেখ করেছে বিএসএফ। তবে বিএসএফের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দাবি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এই পাচারকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানায়।

সামনে কুরবানির ঈদ। এজন্য গরু পাচার বাড়তে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএসএফ গত ৬ জুলাই দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে হিন্দি ভাষায় বিবৃতিটি দিয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, পাচার হওয়া প্রাণিদের চোখ বেঁধে দেওয়া হয় প্রথমে। এরপর তাদের কলাগাছের গুড়ির সঙ্গে বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ভাসতে ভাসতে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছলে সেখানে কয়েকশো গবাদিপশু পাচারকারীরা দাঁড়িয়ে থাকে। পানি থেকে প্রাণিদের উঠিয়ে স্পিডবোটে করে নিয়ে চলে যায়। এই কাজটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেনাদের (সদস্য) সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতেই করা হয়।

বিএসএফ এর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টেয়িয়ার-এর ডিআইজি এস এস গুলেরিয়ার স্বাক্ষরে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রাণিগুলিকে পরম যত্নের সঙ্গে লালন-পালন করা হয়। কিন্তু কোরবানি ঈদের নামে উৎসর্গ করে জবাই করার অর্থ হল নির্যাতন করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শারীরিক এবং মানসিকভাবে গবাদি পশুদের যেভাবে নির্যাতন করা, তাতে সেই মাংস খাওয়া উচিত নয় কখনই। কারণ ততক্ষণে প্রাণিটির দেহে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে এদের মাংসে অনেক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াও জন্মায়। এজন্য যাঁরা এই মাংস খান তাঁদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বিএসএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতে যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা, ঈদের সময় বাংলাদেশে সেই গরু বিক্রি হয় দেড় লক্ষ টাকায়। প্রতিটি গরুর জন্য চোরাচালানকারীরা ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন বলেও দাবি করা হয়েছে, বিএসএফ এর এই বিবৃতিতে।

উল্লেখ্য, এর আগে ভারত-চীন উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধাকে ‘খয়রাতি’ শব্দ ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো যে সমালোচনার মুখে পড়েছিল; সেই ঘটনায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৯ জুন জানায়, চীনের বাজারে আরও পাঁচ হাজার ১৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দেশটিতে মোট শুল্কমুক্ত পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল আট হাজার ২৫৬টি। এর ফলে চীনে বাংলাদেশের মোট রফতানি পণ্যের ৯৭ শতাংশই শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় এলো।

এরপরই ওই শব্দ ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করে আনন্দবাজারসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিষয়টিকে তেমন পাত্তাই দেননি। বরং ২২ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে ভারতীয় কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। চীনের দেয়া সুবিধা সম্পর্কে যে শব্দের ব্যবহার তারা করেছে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তবে এর বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে চাই না।

এর আগের সপ্তাহে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত ও শতাধিক গুরুতর আহত হয়।

এমজে/