দুদকের সুপারিশ এক বছর ফাইলচাপা

ওয়াসা তিতাসে ৩৩ খাতে দুর্নীতি

ওয়াসা তিতাসে ৩৩ খাতে দুর্নীতি

ওয়াসা ও তিতাসের ৩৩ খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে দুদকের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এক বছরেও বাস্তবায়ন করেনি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান দুটি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক টিম অনুসন্ধান চালিয়ে দুর্নীতির উৎসগুলো শনাক্ত করে।

এসব দমনে ২৪ দফা সুপারিশও করে সংস্থাটি। কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠানেই দুদকের সুপারিশ চাপা পড়ে আছে। দীর্ঘদিনেও এগুলো বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

ওয়াসা-তিতাসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সেভাবে কথা বলার পরও কারও কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত বছরের ১৮ জুলাই ওয়াসার দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের হাতে তুলে দেন দুদকের কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।

এতে ১১ খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা রোধে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ না করে শতকোটি টাকার বিল তুলে নেয়া, অযৌক্তিক কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে ওয়াসার একাধিক প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য প্রতিবেদনের মাধ্যমে মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়।

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, প্রকল্প পরিচালক, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ একটি সিন্ডিকেট জড়িত। ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ করেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা।

কাজের অগ্রগতির সঙ্গে ঠিকাদারের পরিশোধিত বিলের পার্থক্যও রয়েছে বিস্তর। অপর দিকে গত বছর ১৭ এপ্রিল তিতাসের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের হাতে তুলে দেয় দুদক।

এতে তিতাসে দুর্নীতির ২২ উৎস চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, তিতাসে গ্যাস সংযোগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। অবৈধ সংযোগ, মিটার টেম্পারিং, কম গ্যাস সরবরাহ করেও সিস্টেম লস দেখানো হয়।

বাণিজ্যিক গ্রাহককে শিল্পশ্রেণির গ্রাহক হিসেবে সংযোগ দেয়া হয়। এই সংস্থার অসাধু কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে মিটার টেম্পারিং করে গ্রাহকের প্রকৃত বিল গোপন করেন। সরকারকে ঠকিয়ে নিজেরা লাভবান হন। অবৈধভাবে সংযোগ নিতে তিতাসের কর্মচারীকে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।

এখন সেই রেট আরও বেড়েছে। এভাবেই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছেন প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে। রাজধানীর আশপাশে ৫ এলাকায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৫৫ অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করে দুদকের টিম।

এসব বন্ধেই সুপারিশ করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হোসেন খান বলেন, আমার মনে হয়, সুপারিশ কার্যকরভাবে হয়তো বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা যখন খোঁজ নেব, তখন হয়তো ফাইল নড়াচড়া শুরু হবে।

তিনি বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে তারা যদি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করেন, আমরা অনুসন্ধানে গেলে তখনও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি রোধে যে পথ দেখিয়েছি, তা বাস্তবায়ন না হলে আমাদের শক্ত হতে হবে। আমাদের সুপারিশ ছিল যেন দুর্নীতি কমে আসে।

দুদকের রিপোর্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান লিখিত প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। ওয়াসায় ১১ ধরনের দুর্নীতি শনাক্ত করে তা রোধে ১২ দফা সুপারিশ করেছে দুদক।

প্রতিবেদনটি দেখেছেন কি না এবং সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছেন কি না, তা প্রশ্ন আকারে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজে জবাব দেননি।

ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এএম মোস্তফা লিখিত জবাব দেন। তিনি বলেন, দুদক প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

প্রতিবেদনটির আলোকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদারকিতে ঢাকা ওয়াসা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা বিস্তারিত জানাননি।

তিতাসের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির এমডি আলী আল মামুন ফোন ধরেননি। জিএম তারেক সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, এগুলো প্রশাসনিক বিষয়, আমি ভালো বলতে পারব না। তিনি অন্য এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। ওই কর্মকর্তাও কোনো জবাব দেননি।

ওয়াসায় দুর্নীতি : প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুদক টিম ওয়াসায় দুর্নীতির যে ১১টি উৎস চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর মধ্যে প্রকল্প কাজ ও অন্তর্বর্তীকালীন পানি সরবরাহ প্রকল্পে দুর্নীতিসহ ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন সিস্টেমে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি।

ঢাকাসহ বৃহত্তর মিরপুর এলাকার পানির চাহিদা পূরণকল্পে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা হ্রাসকরণ প্রকল্পটি ২০১২ সালের ২২ নভেম্বর অনুমোদিত হয়। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হলেও ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তব কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এ কাজে ঠিকাদারকে ৩১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা পরিশোধও করা হয়েছে, যা সংশোধিত ডিপিপি মূল্যের ৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে কাজের অগ্রগতির সঙ্গে ঠিকাদারের পরিশোধিত বিলের অনেক পার্থক্য রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার (ফেজ-৩) প্রকল্পে’ দুর্নীতির বিষয়ে বলা হয়, ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। অথচ প্রকল্পের কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

একইভাবে ‘পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ (ফেজ-১) প্রকল্পেও’ দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে দুদক। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, নবাবপুর, লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় পানির চাহিদা পূরণের জন্য ৪৫০ এমএলডি সুপেয় পানি সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের’ ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। এ প্রকল্পে ২৩৮ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৮ শতাংশ।

দুদকের প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পগু নবায়ন করার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই।

ব্যক্তিমালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে এ কাজ চলে গেছে।

এক্ষেত্রে ওয়াসা এখনও ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করায় প্রকৌশল ও রাজস্ব শাখার সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

এসব দুর্নীতি রোধে দুদকের প্রতিবেদনে যে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অর্থ অপচয় রোধে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থা কর্তৃক অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে যৌথ পরিমাপ টিম ও মনিটরিং টিম গঠন করা।

এছাড়া প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরির সময় কাজের যথার্থতা ও উপযোগিতা আছে কি না, তা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত হতে হবে। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যাতে অহেতুক বাড়ানো না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রকল্পের কাজে দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটিতে দাতা সংস্থার প্রতিনিধিসহ টেন্ডার ও ক্রয়কার্য যথাযথ হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করার জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক শক্তিশালী টিম গঠন করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ঠিকাদার যতটুকু কাজ করছে, তার গুণগত মান যাচাইয়ের ওপরই বিল পরিশোধ করার কথা বলা হয়।

তিতাসে দুর্নীতি : দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিতাসে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় গ্যাসের অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে। অবৈধভাবে বিভিন্ন কারখানায় গ্যাসের লোড নেয়া এবং বাড়ানো হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, তিতাসে ৬ শতাংশ সিস্টেম লস হয় অবৈধ সংযোগের কারণে।

ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোয় বিশেষ করে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অবৈধ গ্যাসলাইন সংযোগের তথ্য পাওয়া যায়।

গৃহস্থালির চেয়ে শিল্পেই বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। রাতের আঁধারে অবৈধ সংযোগগুলো দেয়া হয়। তিতাসে কেউ নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করলে বা অবৈধ সংযোগ বৈধ করার জন্য আবেদন করলে সেটি সহজে অনুমোদন পায় না। এর কারণ হিসেবে দুদক বলছে, বৈধ সংযোগের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট অর্থ নেয়ার সুযোগ পায় না।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে দুদক বলছে, একটি অবৈধ সংযোগ নিতে তিতাসের অসাধু কর্মচারীকে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হতো। এখন সেটি আরও বেশি।

তাই তারা অবৈধ সংযোগকে বৈধ করতে আগ্রহী নয়। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। আদালত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও রাতের আঁধারে সেটি অর্থের বিনিময়ে পুনঃসংযোগ দেয়া হয়। অনেক সময় অদৃশ্য হস্তক্ষেপে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়। ওই হস্তক্ষেপের কারণেই অবৈধ সংযোগ বন্ধও করা যায় না।

শিল্পশ্রেণির গ্রাহকদের কম মূল্যে গ্যাস সংযোগ দেয়ার নিয়ম থাকায় অনেক সময় অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহক যেমন- হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বেকারি, সুপার শপ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে শিল্পশ্রেণির গ্রাহক হিসেবে সংযোগ দেয়া হয়। অবৈধ সংযোগের পাশাপাশি মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমেও তিতাসে দুর্নীতি হয়। কিছু অসাধু কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে মিটার টেম্পারিং করে গ্রাহকের প্রকৃত বিল গোপন করে থাকেন।

অনুমিত পরিমাণের চেয়ে গ্যাস কম সরবরাহ করেও সিস্টেম লস দেখানোর অভিযোগ আছে তিতাসে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দুদক দেখেছে, ওই বছর আবাসিক খাতে অনুমিত প্রবাহ ছিল ১০ হাজার ৩১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৮ ঘনফুট।

কিন্তু ব্যবহার হয়েছে ৮ হাজার ৮৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৯ ঘনফুট। অনুমিত সরবরাহ থেকে ১ হাজার ৪৭৭ কোটি ৯৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৯ ঘনফুট গ্যাস কম ব্যবহার হয়েছে।

যার মূল্য ২৯২ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯২১ টাকা। তার পরও সিস্টেম লস দেখানো হয়েছে। অনুসন্ধানে দুদক জেনেছে, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় অবৈধ সংযোগ বা বাইপাস করে তা গৃহস্থালিতে সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়।

অবৈধ চুলার জন্য বৈধ চুলার সমান টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করার তথ্যও পেয়েছে দুদক। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে জিনজিরা, ফতুল্লা, সোনারগাঁ, নরসিংদী ও গাজীপুর- এই ৫ এলাকায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৫৫টি অবৈধ চুলা বা সংযোগ চিহ্নিত করা হয়।

প্রতি মাসে চুলাপ্রতি ৬৫০ টাকা হারে ওই গ্যাসের দাম হয় ৯২ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। কিন্তু ওই অবৈধ সংযোগগুলো চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন না করায় ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে দুদক মনে করছে।

এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ১২ দফা সুপারিশও দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে- মিটার টেম্পারিং রোধ এবং গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় বন্ধ করতে ডিস্ট্রিবিউশন এবং গ্রাহক উভয় ক্ষেত্রে প্রি-পেইড মিটার চালু করা।

অবৈধ সংযোগ রয়েছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে আকস্মিক পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়।

পরিদর্শনে অবৈধ সংযোগ পাওয়া গেলে ওই এলাকার তিতাসের পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রতিটি অবৈধ গ্রাহকের কাছ থেকে উচ্চ হারে জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা করা।

অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী ট্রুথ কমিশনে যাওয়া তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভ্যাসগতভাবে অপরাধী বলে দুদকের কাছে মনে হয়েছে। তাই তিতাসের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ট্রুথ কমিশনে গিয়েছিলেন, তাদের পদোন্নতি ও কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন না করার জন্য দুদক থেকে বলা হয়।সূত্র : যুগান্তর

এমজে/