দুর্নীতি-নারী কেলেঙ্কারি : গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি

দুর্নীতি-নারী কেলেঙ্কারি : গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি

বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ট্রাস্টি বোর্ডের সব সদস্যের সম্মতিক্রমে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

শনিবার বিকেলে ঢাকার ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ভবনের মেজর এটিএম হায়দার বীরউত্তম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক হোসনে আরা শাহেদ, অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানু উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জুমের মাধ্যমে জরুরি সভায় যোগ দেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদ্দাচ্ছের আলী, ওয়ালিউল ইসলাম ও শিরীন পারভীন হক।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দিয়ে ২০০২ সালের ৩ আগস্ট গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন দেলোয়ার হোসেন। কিন্তু বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড তাঁর আচার-আচরণ দেখে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় ট্রাস্টি বোর্ড গোপনে মো. দেলোয়ার হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তদন্ত করে এবং জানতে পারে তিনি এইচএসসি পাস মাত্র। জীবন বৃত্তান্তে ভুয়া স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেখিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধোকা দিয়ে আসছেন।

এদিকে, বিষয়টি টের পেয়ে রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন তাঁর অফিসে রাখা ব্যক্তিগত ফাইল গায়েব করে দেন। একপর্যায়ে দেলোয়ার হোসেনকে ভাউচারসহ যেকোনো অনুমোদন, ব্যাংক চেকে স্বাক্ষরসহ সব অফিসিয়াল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। নতুন চেক সিগনেটরি নির্ধারণ করা হয় উপাচার্য ডা. লায়লা বানু ও অ্যাকাউন্স অ্যান্ড ফিন্যান্সের উপপরিচালক মো. আবদুল কাদেরকে।

জানা যায়, মো. দেলোয়ার হোসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রায় ২০ বছর কর্মরত ছিলেন। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে যোগ দিয়ে অন্যের জমি দখল, জমির ভুয়া দলিল তৈরি, মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা ও মারামারিতে পারদর্শিতা দেখিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নেন। তিনি নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর পাস বলে পরিচয় দিতেন। আর ধীরে ধীরে পদোন্নতি পেয়ে উপরের দিকে গেছেন। এভাবে গণস্বাস্থ্যে ২০ বছর চাকরি করেন। যার মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উচ্চতর প্রশাসনিক পদেও বিশেষ করে পরিচালক প্রশাসন/নির্বাহী পরিচালকের পদেও দায়িত্ব পালন করেন।

দেলোয়ার হোসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতারণা করে নিরাপত্তাপ্রহরী ইনচার্জ থেকে উচ্চতর পদে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি যখন গণ বিশ্ববিদ্যালয় যোগ দেন তখন গণস্বাস্থ্যে তাঁর বেতন ছিল ৪০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকাকালীন নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর নিয়ন্ত্রণে কর্মরত অনেক নারীই নিগৃহীত হয়েছেন। তারা অনেকেই চাকরি হারানো ও সামাজিকতার ভয়ে এসব প্রকাশ করতেন না।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের যৌন হয়রানির বিষয়ও এর আগে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ২৬ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে যাতে রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন এক নারীকে প্রলোভন দেখানোর রেকর্ডকৃত টেপ পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রারের এসব আচরণের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েকে গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মেয়েদের ভর্তি অনেক কমে গেছে। এসব অভিযোগে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এমজে/