অপ্রস্তুত বাংলাদেশের পেঁয়াজে ভারতের ‘আগুন’

অপ্রস্তুত বাংলাদেশের পেঁয়াজে ভারতের ‘আগুন’

ভারত আকস্মিকভাবে রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় অতীতে যা হয়েছে, এবারও ঠিক সেই পরিস্থিতি। এবারও বাংলাদেশের কোনো প্রস্তুতি ছিল না৷ রফতানি বন্ধের ঘোষণার পর সীমান্তে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক আটকে দেয়া হয়। এলসির বিপরীতে পাইপলাইনে থাকা পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে না৷ সীমান্তের ওপারে বিভিন্ন পয়েন্টে পাঁচ শ'র মতো ট্রাক আটকে দেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা জানিয়েছেন৷ তারা জানান, প্রতি টন ২৫০ ডলার দরে এলসি খোলা হলেও এখন ওই ট্রাকগুলো ছাড় করাতে ৭৫০ ডলার করে দাবি করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোালে আমদানিকারক সোনালী ট্রেডার্সের রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘‘যেসব ট্রাক আটকে দেয়া হয়েছে সেগুলো আসলে কাগজে-কলমে আমাদের এখানে রফতানি হয়ে গেছে। তারপরও আমাদের পেঁয়াজ দেয়া হয়নি। আমাদের আগে কিছু জানানোও হয়নি।’’

তিনি জানান, গোজাডাঙায় দুই শ', বেনাপোলে দেড় শ', হিলিতে এক শ', সোনা মসজিদে দুই শ' এলসি করা পেঁয়াজের ট্রাক আটকে দেয়া হয়েছে। ভারত রফতানি বন্ধের প্রধান কারণ হিসেবে তাদের অভ্যন্তরীণ ঘাটতির কথা বলছে।

বাংলাদেশে নতুন দেশি পেঁয়াজ উঠবে নভেম্বরে৷ তার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রধানত আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয়। আর প্রায় পুরোটাই আমদানি হয় ভারত থেকে। গত বছর একই পরিস্থিতিতে মিয়ানমার, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়৷ তারপরও দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরুর আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

টিসিবি পেঁয়াজের যে বাজার দর মঙ্গলবার দিয়েছে তাতে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজি ১০০ টাকা। গত মাসে একই সময়ে এর কেজি ছিল ৬০ টাকা৷ আর আমদানি করা পেঁয়াজের এখন বাজার দর প্রতি কেজি ৮৫ টাকা। গত মাসে একই সময়ে ছিল ৫০ টাকা।

কলাবাগানোর খুচরা বিক্রেতা মিন্টু মিয়া জানান, দেশি পেঁয়াজ এখন ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। একদিন আগেও ছিল ৬৫ টাকা৷ তারা এখন দেশি পেঁয়াজ পাইকারি কিনছেন ৯০ টাকা দরে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ তারা এখন বিক্রি করছেন ৯০ টাকা কেজি দরে। একদিন আগে ছিল ৫০ টাকা কেজি৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ দাম আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।’’

আরেকজন দোকানদার আব্দুর রহিম বলেন, ‘‘আমি আপাতত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছি। দেখি বাজার কোন দিকে যায়।’’

পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে আমদানির পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি বাজারে অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এখন পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই বলে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দীন৷ তিনি বলেন, দাম বাড়ানো একটা কারসাজি। তিনি আরো বলেন, ‘‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি যে বন্ধ করবে এটা নিয়ে আমাদের কিছু জানায়নি।’’

মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে পেঁয়াজ অন্য দেশ থেকে যাতে দ্রুত আমদানি করা যায় তার জন্য এলসি খোলা সহজ করে দিয়েছে৷ আর পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক শতকরা পাঁচ ভাগ প্রত্যাহারের জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে। পেঁয়াজের মজুত ও সরবরাহ মনিটরিং করে যাতে কোনো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করা হয় তা নজরদারির জন্য জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে টিসিবি ৩০ টাকা কেজি দরে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে৷ তবে তা চাহিদার তুলনায় কম।

তবে পুরান ঢাকার পেঁয়াজের আড়ৎদার আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘‘ভারত পেঁয়াজ না দিলে তার প্রভাব বাজারে পড়বেই৷ কারণ, বছরে এই সময়ে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। আর আমরা যা পেঁয়াজ আমদানি করি তার প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আসা৷ তাই বিকল্প আমাদানি ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার অন্য কোনো উপায় নেই।’’

এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার টন। পেঁয়াজের চাহিদা ধরা আছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। এই দুই লাখ মেট্রিক টন ঘাটতির সাথে আরো সাত-আট লাখ টন ঘাটতি হয়৷ কারণ, উৎপাদিত পেঁয়াজের ৩০ ভাগ পচে যায় বা নানা কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এই পুরো ঘাটতি আমদানির মাধ্যমেই মেটানো হয়। গত বছর বাংলাদেশ প্রায় ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে।

এবার এ পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে চার লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন। এখন চাহিদা মেটাতে আরো কমপক্ষে সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমানি করতে হবে৷ সেটা কোথা থেকে আনা যায় এবং কত দ্রুত আনা যায় তাই ভাবনার বিষয়৷ কারণ, দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে আগামী নভেম্বর নাগাদ। সূত্র : ডয়চে ভেলে

এমজে/