ক্যাসিনো ইস্যুতে সিআইডির তদন্ত, ১৩ মামলার ৯টিতে চার্জশিট

ক্যাসিনো ইস্যুতে সিআইডির তদন্ত, ১৩ মামলার ৯টিতে চার্জশিট

ক্যাসিনো ইস্যুতে মানি লন্ডারিং মামলায় সেলিম প্রধানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে রোববার চার্জশিট দিয়েছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।

অনলাইন ক্যাসিনোর মধ্যমে সেলিম প্রধান ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৬ টাকা পাচার করেছেন। এ নিয়ে সিআইডিরি ক্যাসিনোসংক্রান্ত মানি লন্ডারিং ১৩ মামলার ৯টিতে চার্জশিট দেয়া হল। বাকি চার মামলায় শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে। সিআইডির সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সেলিম প্রধানের সঙ্গে আরও যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তারা হলেন- আক্তারুজ্জামান, মো. রোমান, আরিফুর রহমান ওরফে সীমান্ত অরিফ, চৌধুরী গোলাম মাওয়ালা ওরফে শাওন এবং ইয়ংসিক লি।

তাদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২ অক্টোবর গুলশান থানায় মামলা হয়েছিল। চার্জশিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার আগে র‌্যাব চার আসামিকে গ্রেফতার করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকার দেশি মুদ্রা, ৭০ লাখ টাকার বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এসব মুদ্রা এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। মামলা তদন্তকালে সিআইডি সেলিম প্রধানের ছয় কোটি টাকার দুটি চেক বই উদ্ধার করে।

বিভিন্ন ধরনের নয়টি প্রতিষ্ঠান ও থাইল্যান্ডে একটি বাগানবাড়ির সন্ধান পায়। এছাড়া আসামিদের ৮৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করে।

সূত্র আরও জানায়, সিআইডিতে আসা মামলাগুলোতে ৩২ জন আসামি ছিলেন। তদন্ত শুরুর পর এ পর্যন্ত আসামির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তদন্তে নামার পর সিআইডি ৩৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা জব্দ করে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে। আরও বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০৫ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। এর বাইরে তদন্তে আসামিদের বিপুল সংখ্যক ফ্ল্যাট ও জমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলার মধ্যে গুলশান থানার দুটি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটির চার্জশিটে খালেদসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। ৩৯ কোটি টাকা জব্দ দেখানো হয়েছে।

অপর মামলায় খালেদকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। খালেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় করা মামলাটির তদন্ত কাজ এখনও চলছে।

গুলশান থানায় করা একটি মামলায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জিকে শামীমসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ মামলার চার্জশিটে ১ কোটি ৮১ লাখ ২২ হাজার টাকা, নয় হাজার ইউএস ডলার এবং ৭৫২ সিঙ্গাপুর ডলার উদ্ধার দেখানো হয়েছে।

১৬ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর এবং ৩২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তে তিনটি মোটরসাইকেল ও ৫১ দশমিক ৮৩ কাঠা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

গেণ্ডারিয়া থানার একটি মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু এবং হারুনর রশিদসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ মামলায় এনুসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

জব্দ করা হয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৫ টাকা। এছাড়া দুটি গাড়ি, তিনটি মোটরসাইকেল, ১২১টি ফ্ল্যাট ও ২৫ কাঠা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

ওয়ারী থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় এনামুল হক এনুসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ মামলায় এনুসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এনু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ মামলার চার্জশিটে দুটি গাড়ি, তিনটি মোটরসাইকেল, ১২১টি ফ্ল্যাট ও ২৫ কাঠা জমির সন্ধানের কথা উল্লেখ করা হয়।

মতিঝিল থানায় করা একটি মামলায় মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়াহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া একটি জিপ গাড়ি, একটি প্লট ও একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে।

সূত্রাপুর থানায় করা অপর মামলার চার্জশিটে এনামুল হক এনুসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৮৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ১৬৪ ধারায় দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তদন্তাধীন মামলাগুলোর মধ্যে ওয়ারী থানায় করা একটি মামলায় এনামুল হক এনু এবং রুপন ভূঁইয়ার ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক তারেকুজ্জামান রাজিবসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়া এ মামলায় একটি টয়োটা হার্ড জিপ, একটি ফ্ল্যাট ও দুটি প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে। সবশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে সিআইডি। এ মামলায় মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানতে চাইলে সিআইডির প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, মানি লন্ডারিং ইস্যুতে সিআইডির হাতে যেসব মামলার তদন্তভার এসেছিল সেসবের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চার্জশিট দেয়া হয়েছে।

তদন্তাধীন মামলার তিনটিতে শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে। ওই মামলার (সম্রাটের বিরুদ্ধে) তদন্ত মাত্র শুরু হয়েছে। তাই তদন্ত শেষ করতে একটু সময় লাগবে।

তিনি জানান, চার্জশিটকৃত এবং তদন্তাধীন মামলা ছাড়াও ক্যাসিনো ইস্যুতে আরও কয়েকটি ঘটনায় অনুসন্ধান চলছে। মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী মামলা করার আগে অনুসন্ধান করতে হয়। সে অনুযায়ী অনুসন্ধান চলছে।

অনুসন্ধানে অনেকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষে আরও বেশ কিছু মামলা করা হবে।

এমজে/